মালায় অবস্থিত একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতি স্থানান্তরের ফলে সেখানকার স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যার জেরে একটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (এনজিও) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পশু কল্যাণ তহবিল (আইএফএডব্লিউ) নামক সংস্থাটি মালাউয়ির কাসুঙ্গু জাতীয় উদ্যানে ২৬৩টি হাতি স্থানান্তরিত করে।
এই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হাতির আক্রমণে তাদের ক্ষেতখামার ধ্বংস হয়েছে এবং ১০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা এখন ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা চেয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন।
কাসুঙ্গু ন্যাশনাল পার্কটি জাম্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এবং মালাউয়ির দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি সংরক্ষিত এলাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ২০২২ সালের জুলাই মাসে হাতি স্থানান্তরের পরেই মানব-হাতি সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে।
এর ফলস্বরূপ, কমপক্ষে ১৬৭টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক জানান, হাতির পাল তার ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে, যার ফলে তিনি মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
এমনকি হাতির আক্রমণে আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাকে।
তিনি আরও বলেন, “এখন আমি একা চলাফেরা করতে ভয় পাই এবং সব সময় আতঙ্কে থাকি।
মামলার সঙ্গে যুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বলছেন, তারা হাতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চান, তবে তাদের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা ক্ষতিপূরণ এবং পার্কের চারপাশে বেড়া নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
তাদের আশঙ্কা, এই সমস্যার সমাধান না হলে তাদের ভবিষ্যৎ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
আইএফএডব্লিউ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই মামলার বিষয়ে অবগত এবং মানব-হাতি সংঘাতের ঘটনায় তারা গভীরভাবে শোকাহত।
তারা আরও বলেছে, হাতি স্থানান্তরের সময় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছিল এবং মালাউই সরকারের জাতীয় উদ্যানগুলির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের পক্ষে যুক্তরাজ্যের একটি আইনি সংস্থা, ‘লেই ডে’ এই মামলা পরিচালনা করছে।
মামলাটি যুক্তরাজ্য, জাম্বিয়া এবং মালাউইতে দায়ের করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে ইংল্যান্ডের হাইকোর্টেও তোলা হতে পারে।
এই ঘটনার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে একটি জটিল সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।
যেখানে একদিকে বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনিভাবে স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান