যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দশক ধরে বসবাস করা কিছু মানুষের জীবনযাত্রা হঠাৎ করেই বদলে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো তাদের জন্মভূমি ছেড়ে এসেছেন অনেক ছোটবেলায়, আবার কারো বা কেটেছে পঞ্চাশ বছরের বেশি সময়।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন বিষয়ক কঠোর নীতির কারণে তাদের এখন দেশ ছাড়ার হুমকী দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছেন জর্জিয়ার নাপিত রডনি টেইলর, যিনি শৈশবে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা এসেছিলেন এবং বর্তমানে দ্বৈত অঙ্গহীন অবস্থায় আটক রয়েছেন।
এছাড়াও রয়েছেন আর্জেন্টিনার নাগরিক আলফ্রেডো ওরেলানা এবং ফিলিপাইনের নাগরিক লিউলিন ডিক্সন।
রডনি টেইলর, যিনি একসময় সামান্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, এখন তার অতীতের সেই ভুলের কারণে দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ছোটবেলায় লিবারিয়া থেকে আসা টেইলর এখন জর্জিয়ার একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, তিনি একজন নাপিত এবং সেখানকার স্থানীয় একটি কমিউনিটিতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের পরিকল্পনা করছিলেন। তার বাগদত্তা এবং পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একজন আমেরিকান হিসেবেই বেড়ে উঠেছেন।
তার ভাষায়, ‘আমি যখন ১৭ বছর বয়সে জানতে পারি যে আমি অভিবাসী, তখন বিষয়টি আমার কাছে নতুন লেগেছিল। আমার কাছে লাইবেরিয়ায় ফিরে যাওয়াটা একটি বিদেশি রাষ্ট্রে যাওয়ার মতোই।’ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি বর্তমানে ডিটেনশন সেন্টারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
আরেকজন ভুক্তভোগী হলেন আলফ্রেডো ওরেলানা। তিনি একজন গ্রিন কার্ডধারী এবং ভার্জিনিয়াতে বসবাস করেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একজন মানুষের দেখাশোনা করেন। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পরেই তাকে আটক করা হয়। জানা গেছে, তিনি সামান্য একটি আর্থিক প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
ওরেলানার স্ত্রী বর্তমানে সন্তানসম্ভবা এবং তাকে একাই সব সামলাতে হচ্ছে। ওরেলানার পরিবার জানায়, তিনি কখনো কোনো খারাপ কাজ করেননি এবং সবসময় মানুষের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
অন্যদিকে, লিউলিন ডিক্সন নামের একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান যিনি গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাকেও বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা যায়, ২০০১ সালে হিসাবরক্ষণে সামান্য ত্রুটির কারণে তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ডিক্সন ফিলিপাইনে তার দাদার কাছে করা একটি প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেননি।
ডিটেনশন সেন্টারে থাকা অবস্থায় তিনি অন্যান্য বন্দীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন।
এই ঘটনাগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোরতার একটি চিত্র তুলে ধরে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা মানুষগুলোও বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
আইনজীবীরা বলছেন, পুরনো অপরাধের কারণে তাদের আটক করা হচ্ছে, যদিও তারা সমাজের জন্য ভালো কাজ করেছেন। তাদের পরিবারগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তারা তাদের প্রিয়জনদের সাথে থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন