পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অসুস্থতা: ভ্যাটিকানে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন
প্রায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ইতালির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর, অবশেষে ভ্যাটিকানে ফিরে এসেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর বয়স এখন ৮৮ বছর।
গুরুতর অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার পর কীভাবে তিনি ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে এখন জল্পনা চলছে। পোপের শারীরিক দুর্বলতা তাঁর দায়িত্ব পালনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পোপের সুস্থ হতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। এই সময়ে তাঁকে জনসমাগম এবং শিশুদের সঙ্গে দেখা করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়।
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ভ্যাটিকান সফরের পরিকল্পনাও আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
পোপের শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে আসন্ন পবিত্র সপ্তাহ ও ইস্টার সানডে-র অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তাছাড়া, আগামী মে মাসে তুরস্ক সফরের পরিকল্পনাও এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। একই সময়ে, ক্যাথলিক চার্চ একটি বিশেষ বর্ষ উদযাপন করছে, যেখানে তীর্থযাত্রীদের আগমন ঘটে।
এমতাবস্থায়, পোপের জন্য তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রেখে দায়িত্ব পালন করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পোপের শারীরিক দুর্বলতা তাঁকে দুর্বল করে দিলেও, সম্ভবত তিনি সমাজের দুর্বল ও আশ্রয়হীন মানুষের প্রতি তাঁর সমর্থন আরও জোরালোভাবে ব্যক্ত করতে পারেন।
এই বিষয়ে ভ্যাটিকানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, কার্ডিনাল মাইকেল জর্নি, সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পোপ ফ্রান্সিস সবসময়ই দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে তাঁর এই মানবিক দিকটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।”
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পোপ দ্বিতীয় জন পলের অসুস্থতার সময়েও চার্চের নেতৃত্ব একই ভাবে পরিচালিত হয়েছিল।
তবে, পোপ ফ্রান্সিসের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনো সহকারী নিয়োগ করা হয়নি। চার্চের ইতিহাসবিদ আলবার্তো মেলোনি মনে করেন, পোপের নেতৃত্বের ধরনটি এমন যে, তিনি সহজে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন না।
তাঁর শারীরিক দুর্বলতার কারণে হয়তো আগের মতো সক্রিয় থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।
পোপের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে, এটি সম্পূর্ণভাবে তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে, পোপ ফ্রান্সিস কাসা সান্টা মার্তা-তে অবস্থান করছেন, যেখানে তাঁর জন্য একটি বিশেষ আরামদায়ক বিছানা স্থাপন করা হয়েছে।
সেখানে তিনি নিয়মিত অক্সিজেন গ্রহণ করছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সার্বক্ষণিক চিকিৎসা পরিষেবাও পাচ্ছেন।
তাঁর ব্যক্তিগত নার্স এবং ভ্যাটিকান-এর চিকিৎসক নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করছেন।
পোপ ফ্রান্সিস একজন দৃঢ়চেতা এবং মিশনারি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি। অতীতেও তিনি কঠিন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত সেরে উঠেছেন।
তাই, তাঁর এই অসুস্থতা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন