বাংলার ফুটবল বিশ্বে নারী খেলোয়াড়দের উত্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময়ে ইংল্যান্ডের তারকা ফুটবলার মিলি ব্রাইট তাঁর সতীর্থ লুসি ব্রোঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মুখ খোলার সাহসের প্রশংসা করেছেন। ব্রাইট মনে করেন, ব্রোঞ্জের এই পদক্ষেপ অন্যদেরও নিজেদের কথা বলতে উৎসাহিত করবে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ব্রাইট মেয়েদের ফুটবলের উন্নয়নে তাঁর ভাবনা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে খেলাধুলার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।
ইংল্যান্ড এবং চেলসি দলের ডিফেন্ডার মিলি ব্রাইট, বর্তমানে মাঠের বাইরের জীবন নিয়েও বেশ সচেতন। খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের পারফরম্যান্সের বাইরেও সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার একটা তাগিদ অনুভব করেন তিনি।
ব্রাইট বলেন, “মহিলা ফুটবলে আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তা আমাদের অন্যদের সংগ্রাম সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল করে তোলে। সমাজে বিভিন্ন ধরনের বাধা এবং প্রতিদিনের লড়াইগুলো আমাদের চোখে পড়ে।
সবারই ভালোভাবে বাঁচার অধিকার আছে, এবং খেলাধুলা সেই সুযোগ তৈরি করে।”
ছোটবেলায় ব্রাইট যে ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন, সেই কিলমার্শ জুনিয়র্স ক্লাবের মাঠে সম্প্রতি ‘মিলি ব্রাইট পিচ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ব্রাইট বলেন, “আমার এলাকার মেয়েরা যখন এই মাঠে খেলবে, তখন তারা আমাদের স্বপ্ন দেখতে পারবে।
তাদের কাছে এটা একটা অনুপ্রেরণা হবে।” প্রিমিয়ার লীগ, ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকার-সমর্থিত ফুটবল ফাউন্ডেশন-এর ‘লায়োনেসিস ফিউচার্স ফান্ড’-এর মাধ্যমে মেয়েদের ফুটবলকে উৎসাহিত করতে সারা দেশে এমন ৩০টি থ্রি-জি পিচ তৈরি করা হচ্ছে।
ব্রাইট বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবল উন্নয়নের ওপর। তাঁর মতে, খেলাধুলা শুধু শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায় না, বরং এটি সামাজিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
সম্প্রতি তিনি এমন কিছু চিঠি পেয়েছেন যেখানে তাঁর নামে তৈরি হওয়া পিচে খেলা মেয়েদের অনুভূতির কথা লেখা ছিল। ব্রাইটের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের স্বপ্নপূরণে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, “আমি চাই, গ্রামের মেয়েরা যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। তারা যেন বুঝতে পারে, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, কঠোর পরিশ্রম করলে তাদের সফল হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।”
সম্প্রতি, ব্রাইটের সতীর্থ লুসি ব্রোঞ্জ তাঁর অটিজম এবং অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) নিয়ে মুখ খুলেছেন। ব্রাইট মনে করেন, ব্রোঞ্জের এই পদক্ষেপ সমাজে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, “লুসির এই কথা বলার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। অটিজম এবং এডিএইচডি-কে অনেক সময় ভুল বোঝা হয়।
লুসির এই বিষয়টি অন্যদের কাছে উদাহরণ তৈরি করবে।”
ফুটবল ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করতে পেরে ব্রাইট খুবই আনন্দিত। এই ফাউন্ডেশন এমন পরিবেশ তৈরি করে যেখানে শিশুরা নিজেদের মেলে ধরতে পারে এবং তাদের অভিভাবকেরা একে অপরের সাথে মিশতে পারে।
ব্রাইট আরও বলেন, “লুসি ব্রোঞ্জ তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা বার্তা দিয়েছে যে, ভিন্নতা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি একটি বিশেষত্ব। আপনি যেমন তেমনই ভালো এবং আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।”
খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরের জীবন নিয়েও ব্রাইট সচেতন। খেলাধুলার জগতে দর্শকদের ভালোবাসা অফুরন্ত, তবে খেলোয়াড়দের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়।
তাই সবার আবদার রাখা সবসময় সম্ভব হয় না। ব্রাইট মনে করেন, খেলোয়াড় এবং ভক্ত—উভয়কেই এই বিষয়টি বুঝতে হবে।
তাঁর মতে, খেলোয়াড়দের বিশ্রাম এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান