বর্তমান বিশ্বে, দ্রুতগতির জীবনযাত্রায় আমরা প্রায়ই কর্মদক্ষতার নামে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সবার মধ্যেই যেন আরও বেশি কাজ করার, আরও দ্রুত ফল পাওয়ার এক অদম্য চেষ্টা।
কিন্তু এই দৌড়ে আমরা কি হারাচ্ছি না আমাদের মানবিক দিকগুলো? সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কর্মদক্ষতাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার এই প্রবণতার সমালোচনা করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, মুনাফার পেছনে ছুটতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ হিসেবে আমাদের যে স্বাভাবিক জীবন, আনন্দ, এবং উপলব্ধির সুযোগ, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
প্রতিবেদনটিতে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের একটি আপডেটের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ইমেইলের সারসংক্ষেপ তৈরি করে ব্যবহারকারীদের কাছে দ্রুত তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন সময় বাঁচে, তেমনি অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝিও তৈরি হয়।
একইসাথে, কর্মদক্ষতার নামে বিভিন্ন দেশে সরকারি নীতিগুলোতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্যবসা magnate এলন মাস্ক সরকারি দপ্তরগুলোতে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিয়েছেন, কর্মী ছাঁটাই করেছেন এবং কিছু বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এর মূল কারণ ছিল, সরকারি কার্যক্রমকে আরও “কার্যকর” করে তোলা।
যুক্তরাজ্যেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেখানে সরকার কল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ কমাচ্ছে, যা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এমনকি, কর্মহীন ব্যক্তিদের কাজে ফেরাতে ওজন কমানোর ইনজেকশন দেওয়ার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের নীতিগুলো মূলত অর্থনৈতিক সাফল্যের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যা মানুষের সৃজনশীলতা, আবেগ, এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোর প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।
এই “দ্রুত চল, সবকিছু ভেঙে দাও” মানসিকতা থেকে বাঁচতে হলে, আমাদের কিছুটা হলেও এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে। জীবনকে উপভোগ করার জন্য, কিছু অপ্রয়োজনীয় কাজ করা দরকার।
যেমন, বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া। কর্মদক্ষতার পেছনে ছুটে আমরা যেন আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্যটাই ভুলে না যাই।
বাংলাদেশেও কর্মক্ষেত্রে এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে, জীবন শুধু একটি গাণিতিক হিসাব নয়। মানবিক সম্পর্ক, সৃজনশীলতা, এবং মানসিক শান্তির জন্য সময় দেওয়াটাও জরুরি। কর্মদক্ষতার পাশাপাশি, জীবনের অন্য দিকগুলোর প্রতিও আমাদের যত্নবান হতে হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian