মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সুবিধা পেতে আগ্রহীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছে দেশটির সরকার। গ্রিন কার্ড অথবা নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল-এর তথ্য জানতে চাওয়ার একটি প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের পরিপূরক হিসেবে এই পদক্ষেপ নিতে চাইছে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)।
প্রস্তাবিত এই পদক্ষেপের ফলে অভিবাসন বিষয়ক সুবিধা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য তাদের সামাজিক মাধ্যমের আইডি বা হ্যান্ডেল জানানো বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। কর্তৃপক্ষের মতে, এর মাধ্যমে জালিয়াতি রোধ করা, পরিচয় চুরি ঠেকানো এবং জাতীয় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে।
তবে মানবাধিকার সংস্থা এবং মুক্তচিন্তার অধিকারকর্মীরা এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে এবং ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে ভীতি তৈরি হতে পারে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security) ইতিমধ্যে একটি ৬০ দিনের নোটিশ জারি করেছে এবং জনসাধারণের কাছ থেকে এই বিষয়ে মতামত চেয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, গ্রিন কার্ড, নাগরিকত্ব, আশ্রয় এবং অন্যান্য ইমিগ্রেশন সুবিধার জন্য আবেদনকারীদের তাদের সামাজিক মাধ্যমের আইডি জানাতে হতে পারে।
যদিও পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ধারণা করা হচ্ছে, এই নতুন নিয়মের কারণে প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
আবেদনকারীদের সামাজিক মাধ্যমের তথ্য যাচাই করার এই প্রক্রিয়া নতুন নয়। এর আগে, বিশেষ করে ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে সীমিত আকারে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের তথ্য যাচাই করা হতো।
তবে নতুন প্রস্তাবনাটি গৃহীত হলে, যারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো—যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে ও কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের দ্বারা যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে, সরকারবিরোধী কোনো কার্যক্রম অথবা ক্ষতিকর কোনো আদর্শের প্রচার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা।
তবে সমালোচকরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা সবসময় যাচাই করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল।
তারা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করারও সুযোগ তৈরি হতে পারে।
বর্তমানে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং এটি সবসময় নির্ভুল নাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক সাবেক এক কর্মকর্তা লিওন রদ্রিগেজ জানিয়েছেন, এআইকে প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এর মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষিত কর্মকর্তার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এআই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়।
ফলে, অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। যারা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন অথবা ভ্রমণের জন্য আবেদন করছেন, তাদের ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমের তথ্য প্রদানের বিষয়টি এখন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস