ইরানের নারী অধিকারকর্মী ও সরকারবিরোধী সমালোচক মাসিহ আলিনেজাদ এখনো তাঁর জীবন নিয়ে শঙ্কিত। নিউইয়র্কের একটি আদালত সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া একটি হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের রায় দিয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে তিনি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে আছেন, যা তাঁর জন্য দুঃস্বপ্নের মতো।
মাসিহ আলিনেজাদ দীর্ঘদিন ধরে ইরানের সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। নারীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার এই কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে তেহরান সরকার বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে। এর অংশ হিসেবে, তাঁর ব্রুকলিনের বাড়িতে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাড়া করা হয় দুই রুশ সন্ত্রাসীকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেছে। জানা যায়, ইরানের কর্তৃপক্ষ এই খুনের জন্য ৫ লক্ষ ডলারের চুক্তি করেছিল।
২০২২ সালের জুলাই মাসে এই হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে আলিনেজাদ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছেন। নিজের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি একটি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সত্যি বলতে, আমি অনেক কেঁদেছি। এটা আমার জীবন, কোনো সাধারণ খবর নয়। আমি চাই সবাই জানুক, আমি একটি দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
নিরাপত্তার কারণে আলিনেজাদকে একাধিকবার নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হয়েছে। নিজের বাড়ি এবং প্রিয়জনদের ছবি টাঙানোর মতো সাধারণ বিষয়গুলোও তাঁর কাছে এখন অধরা। ব্রুকলিনে নিজের বাগান তৈরি করেছিলেন তিনি, যেখানে গ্রামের স্মৃতি ধরে রাখতে নানা ধরনের সবজি ও ফুলগাছ রোপন করেছিলেন।
মা, বাবা ও ভাইয়ের নামে গাছের নামকরণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু আতঙ্কের কারণে সেই বাগানও তাঁকে ছাড়তে হয়েছে।
আলিনেজাদের মতে, ইরানের সরকার শুধু তাঁর জীবন নয়, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পথে যারা হাঁটে, তাদের সবার জীবনকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক মহলকে ইরানের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা আমাদের ধ্বংস করতে চায়, তা আমরা ডানপন্থী হই বা বামপন্থী, রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেট।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি যে ঐক্যের ছবি দেখেছেন, তা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে বলে আলিনেজাদ মনে করেন। তাঁর মতে, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান