মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নতুন বাণিজ্য নীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি আগামী ২রা এপ্রিলকে ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যেদিন থেকে তিনি বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন।
এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, যেসব দেশ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের নীতি গ্রহণের ফলে আমেরিকার বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে। এর কারণ হলো, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে।
এছাড়া, অনেক আমেরিকান পরিবার বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জর্জরিত, তাই এই শুল্ক বৃদ্ধি তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে, ট্রাম্পের যুক্তি হলো, শুল্কের কারণে যদি বিদেশি গাড়ির দাম বাড়ে, তাহলে আমেরিকানরা দেশি গাড়ি কিনতে উৎসাহিত হবে।
তবে, এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এমনকি, ডাউ জোন্স ইনডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ-এর সূচক এক দিনেই ৭০০ পয়েন্টের বেশি কমে গিয়েছিল।
এছাড়া, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ করতে পারে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, শুল্ক আরোপের ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং কর্মসংস্থান বাড়াবে। তাদের মতে, শুল্কের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আমেরিকায় তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা সরিয়ে আনতে বাধ্য হবে, ফলে স্থানীয় শ্রমিকদের চাহিদা বাড়বে।
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো-র মতে, এই নীতির মাধ্যমে শুধু গাড়ির ওপর শুল্ক বসিয়েই ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে। সেই অর্থে, শুল্ক থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে কর কমানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে।
তবে, অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি। কারণ, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে তা বাণিজ্য চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।
এছাড়া, যদি কোনো কারণে ব্যবসায়ীরা আমেরিকায় উৎপাদন ব্যবস্থা সরিয়ে আনতে রাজি না হয়, তাহলে শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য এর কিছু প্রভাব থাকতে পারে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে চাহিদা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবার, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসলে, বাংলাদেশের জন্য নতুন রফতানি বাজার তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
তথ্য সূত্র: সিএনএন