বন্ধুত্বের নানা স্তর: সম্পর্কের জটিলতা ও “পাশের বন্ধু”-র ধারণা।
আমরা মানুষ, আর সামাজিক জীব হিসেবে বন্ধুত্বের গুরুত্ব আমাদের জীবনে অপরিসীম। ছোটবেলা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমরা বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই সম্পর্কের গভীরতা এবং ধরন পরিবর্তিত হয়।
কারো সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর হয়, কারো সাথে হালকা, আবার কারো সাথে সম্পর্কটা যেন “পাশে থাকা” বন্ধুত্বের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে। আজকের আলোচনা সেই “পাশের বন্ধু” বা “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” নিয়ে, যাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা খুব কাছের না হলেও একেবারে দূরেও নয়।
ধরুন, আপনার এক বন্ধু, যাকে আপনি একসময় খুব কাছের মনে করতেন। একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, হয়তো দূরত্বের কারণে, অথবা জীবনযাত্রার ভিন্নতার কারণে, আপনাদের মধ্যে আগের মতো ঘনিষ্ঠতা নেই।
এখন, বন্ধুদের কোনো আড্ডায় হয়তো আপনাকে সে নিয়মিত ডাকে না, বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানেও আপনার ডাক নাও আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার মনে হতে পারে, “আমি কি তবে তার ‘পাশের বন্ধু’ হয়ে গেলাম?”
বন্ধুত্ব বিশেষজ্ঞ এবং সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের অভিজ্ঞতা খুব স্বাভাবিক। মানুষের জীবনে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা এবং সম্পর্কের গভীরতা সব সময় একরকম থাকে না। কিছু বন্ধু থাকে যারা সব সময় আপনার পাশে থাকে, যাদের সাথে আপনি আপনার জীবনের সবকিছু শেয়ার করেন।
আবার কিছু বন্ধু থাকে যাদের সাথে দেখা হয় কালেভদ্রে, অথবা বিশেষ কোনো উপলক্ষেই কথা হয়। এই ধরনের সম্পর্কগুলো “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” বা “পাশের বন্ধু” হিসেবে পরিচিত।
বন্ধুত্বের এই ভিন্ন স্তরগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সান্নিধ্য আমাদের ভালো রাখতে সাহায্য করে, মানসিক চাপ কমায় এবং একাকীত্ব দূর করে। অন্যদিকে, “পাশের বন্ধু”-দের সঙ্গে কাটানো সময় আমাদের সামাজিক পরিধি বাড়ায়।
নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, যা জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে সহায়ক।
তবে, “পাশের বন্ধু”-র ধারণাটি নেতিবাচক নাও হতে পারে। এমন বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে আপনার স্বাধীনতা বজায় থাকে। কারো প্রত্যাশা পূরণের জন্য আপনাকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয় না।
আপনি নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারেন, নতুন কিছু চেষ্টা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো নতুন কোনো শখ তৈরি করতে পারেন, যেমন – বাগান করা, ছবি আঁকা অথবা রান্নার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন।
সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বন্ধুত্বের এই স্তরটিকে ভালোভাবে বুঝতে পারা জরুরি। আপনি আপনার বন্ধুদের কাছ থেকে ঠিক কী চান, তাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চান, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময় যদি আপনাকে আনন্দ না দেয়, তবে সেই সম্পর্ক থেকে কিছুটা দূরে থাকাই ভালো।
“পাশের বন্ধু”-দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কিছু সুবিধা রয়েছে। তারা আমাদের সামাজিক জীবনে বৈচিত্র্য যোগ করে। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশে আমরা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি।
তবে, গভীর এবং পারস্পরিক সম্পর্কগুলো আমাদের মানসিক শান্তির জন্য অপরিহার্য। তাই, “পাশের বন্ধু”-দের পাশাপাশি, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।
বন্ধুত্ব একটি জটিল বিষয়। সম্পর্কের উত্থান-পতন থাকবেই। তবে, বন্ধুত্বের প্রতিটি স্তরকে সম্মান করা এবং সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। আপনি যদি আপনার বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তবে “পাশের বন্ধু”-রাও আপনার জীবনে মূল্যবান হয়ে উঠবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian