গ্রিনল্যান্ডে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সফর, আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন গ্রিনল্যান্ডে তিন দিনের সফরে গিয়েছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রিনল্যান্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এমন একটি সময়ে এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিক অঞ্চলের এই বিশাল ভূখণ্ডটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
সম্প্রতি, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ডে একটি মার্কিন বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করেন এবং ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অঞ্চলটিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না করার অভিযোগ আনেন। এর পরেই ফ্রেডেরিকসেন তাঁর গ্রিনল্যান্ড সফরের ঘোষণা করেন।
গ্রিনল্যান্ড একটি খনিজ সমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দ্বীপকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও ভৌগোলিকভাবে এটি উত্তর আমেরিকার অংশ, কিন্তু এটি ডেনমার্ক রাজ্যের একটি স্ব-শাসিত অঞ্চল।
বুধবার গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের পথে আগত গ্রিনল্যান্ডের নেতা জেনস-ফ্রেডরিক নিয়েলসেনের সঙ্গে ফ্রেডেরিকসেন হেঁটে যান। তিনি শুক্রবার পর্যন্ত এখানকার মন্ত্রিসভার সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
সফরকালে ফ্রেডেরিকসেন বলেন, “গ্রিনল্যান্ডের মানুষ এবং রাজনীতিবিদরা যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, তা আমার গভীর শ্রদ্ধার যোগ্য।”
আলোচনার বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
নিয়েলসেন সম্প্রতি বলেছেন, তিনি এই সফরকে স্বাগত জানান এবং গ্রিনল্যান্ড কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি নয়।
নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি আরও বলেন, “অন্যরা যখন আমাদের সম্পর্কে কথা বলে, তখন আমাদের তা শুনতে হবে। তবে এতে বিচলিত হওয়া চলবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড ‘নিচ্ছে’। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র তা পাচ্ছে না। আমরা কারও অধীনে নই। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করব।”
“ভয় থেকে আমাদের কোনো কাজ করা উচিত নয়। আমাদের শান্তি, সম্মান এবং ঐক্যের সঙ্গে এর জবাব দিতে হবে। এই মূল্যবোধের মাধ্যমেই আমাদের স্পষ্টভাবে, শান্তভাবে এবং দৃঢ়ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বোঝাতে হবে যে গ্রিনল্যান্ড আমাদের।”
উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ৫৭,০০০ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করছে।
আর্কটিক অঞ্চলের এই দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টা গ্রিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। গত মাসের নির্বাচনে নির্বাচিত নতুন সরকার স্বাধীনতা প্রশ্নে ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী।
গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে থাকা নালেরাক পার্টিকে নতুন সরকার গঠনের আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ডেনিশ প্রতিরক্ষা একাডেমির সহযোগী অধ্যাপক পিটার ভিগো জ্যাকবসেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা হিতে বিপরীত হতে পারে এবং এর ফলে নরমপন্থী দলগুলো ডেনমার্কের দিকে আরও ঝুঁকতে পারে। তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের অনেক মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, কারণ তারা তাকে বিশ্বাস করে না।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন।