যুক্তরাষ্ট্রে ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে আসা এক ভেনেজুয়েলার নাগরিককে অবশেষে মানবিক কারণে মুক্তি দিয়েছে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। ভাইয়ের কিডনি প্রতিস্থাপনে সাহায্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন হোসে গ্রেগোরিও গনজালেজ।
কিন্তু অভিবাসন আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার ফলে তিনি বিতর্কের মুখে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত মানবিক বিবেচনায় তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন হোসে আলফ্রেদো পাচেকো। শিকাগো অঞ্চলে আসার পর তার শরীরে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসকরা জানান, তিনি কিডনি বিকল হয়ে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। এরপর ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ২০২৩ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন হোসে গ্রেগোরিও গনজালেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন তিনি। প্রথমবার তার আবেদন গৃহীত হয়নি, তবে দ্বিতীয়বার তিনি কর্তৃপক্ষের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে সাক্ষাৎকারের সময়সূচী তৈরি করেন।
গণজালেজের যুক্তরাষ্ট্রে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল তার ভাইকে কিডনি দেওয়া। কিন্তু এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে পুরনো একটি বিতাড়ন আদেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। যদিও পরে ভেনেজুয়েলা সরকার বিতাড়ন ফ্লাইট গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়।
শর্ত ছিল, তাকে নিয়মিত অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে হাজিরা দিতে হবে এবং পায়ে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরে থাকতে হবে। এই সময়কালে তিনি ভাইয়ের দেখাশোনা করছিলেন এবং তাদের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি চলছিল।
কিন্তু মার্চের শুরুতে, যখন তারা অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখনই অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের ইলিনয়ের সিসেরোতে অবস্থিত বাসায় হাজির হন এবং গনজালেজকে আবার আটক করেন।
এরপর আদালত তার বিতাড়ন স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন, যা পাচেকো এবং অভিবাসন বিষয়ক কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
সবার মধ্যে যখন চরম অনিশ্চয়তা, তখনই জানা যায়, মানবিক কারণে গনজালেজকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। এই মুক্তি পাচেকোর দেখাশোনার পাশাপাশি তার কিডনি দানের সম্ভাবনাকে আবারও জাগিয়ে তুলেছে।
গণজালেজের মুক্তির পর তারা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। যদি তাদের মধ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উপযুক্ততা পাওয়া না যায়, তবে তারা একটি বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্য নেবেন, যেখানে একাধিক দাতা এবং গ্রহীতাকে একত্রিত করা হয়।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে গনজালেজ যদি কিডনি দিতে পারেন, তবে তিনি একইসঙ্গে দুজন মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় নব্বই হাজারের বেশি মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন। যদিও এই বছর ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, জীবিত দাতার কাছ থেকে পাওয়া গেছে মাত্র ১ হাজার কিডনি।
গনজালেজের এই ঘটনা বিশ্বে অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন