বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন আসে, যেমন— পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া বা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে শক্ত ভাব অনুভব করা। অনেকেরই ধারণা, শরীরকে নমনীয় রাখতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ব্যায়াম করতে হয়।
কিন্তু সত্যি বলতে কি, বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। বরং কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে বয়স্ককালেও শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব।
সাধারণত, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের পরিমাণ কমে যায়। শারীরিক কার্যকলাপ কম হওয়ার কারণে পেশী আরও দুর্বল হয়ে পরে এবং জয়েন্টগুলোতে শক্ত ভাব দেখা যায়।
নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে শরীরের এই নমনীয়তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তবে, এর মানে এই নয় যে, বয়স বাড়লে নড়াচড়ার ক্ষমতা একেবারে কমে যাবে।
কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে বয়স্ককালেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যেতে পারে।
প্রথমেই আসি, দৈনন্দিন জীবনে নড়াচড়ার অভ্যাস তৈরির কথায়। ধরুন, আপনি হয়তো অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন।
এক্ষেত্রে প্রতি এক ঘণ্টা পর চেয়ার ছেড়ে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন। অফিসের করিডোরে হেঁটে আসতে পারেন অথবা সামান্য কিছু স্ট্রেচিং করতে পারেন। এছাড়া, দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কিছু কাজ—যেমন, বাজারের ব্যাগ তোলা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা—এগুলোও শরীরের নড়াচড়ার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয়ত, অল্প সময়ে কিছু ব্যায়ামের অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে। দিনের শুরুতেই ৫ মিনিটের জন্য কিছু সাধারণ ব্যায়াম করা যেতে পারে।
যেমন— হালকা স্ট্রেচিং, যোগা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। অফিসে বসে কাজের ফাঁকে, অথবা টিভি দেখার সময়ও এই ধরনের ব্যায়ামগুলো করা যেতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের জড়তা কমবে এবং নমনীয়তা বাড়বে।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— শরীরের সঠিক ভঙ্গি বা posture বজায় রাখা। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস শরীরের নড়াচড়ার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
গভীরভাবে শ্বাস নিলে শরীরের উপরিভাগের পেশিগুলো শিথিল হয়, যা নড়াচড়ার স্বাধীনতা বাড়ায়। তাই দিনে কয়েকবার গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন।
শ্বাস নেওয়ার সময় খেয়াল করুন, আপনার ফুসফুসের নীচের অংশ প্রসারিত হচ্ছে কিনা। ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন, যেন আপনার শরীরের সমস্ত চাপমুক্ত হয়।
চতুর্থত, শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম বা strength training-এর ওপর জোর দিতে হবে। অল্প সময়ের জন্য হলেও সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এই ধরনের ব্যায়াম করা উচিত।
এর জন্য ভারী ওজন তোলার প্রয়োজন নেই। নিজের শরীরের ওজন ব্যবহার করেই কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে, যা পেশি গঠনে সাহায্য করবে এবং জয়েন্টগুলোকে স্থিতিশীল রাখবে।
স্কোয়াট, ল্যাটারাল লাঞ্জেস, এবং কোমরের মোচড়ের মতো ব্যায়ামগুলো এক্ষেত্রে বেশ উপযোগী।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, শরীরচর্চা শুধু ব্যায়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের জীবনের একটি অংশ।
তাই, প্রতিদিনের সামান্য কিছু প্রচেষ্টা—নিয়মিত হাঁটাচলা, সঠিক ভঙ্গিতে বসা, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম—বয়সকালে শরীরের নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
কোনো শারীরিক সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন