ছোটবেলার স্মৃতিগুলো যেন মনের গভীরে গেঁথে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবনের নানা ব্যস্ততায় হয়তো সেই দিনগুলো অনেকটাই দূরে চলে যায়, কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা আজও আমাদের সেই পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
আর এই সময়ে, সেই নস্টালজিয়াকে সঙ্গী করে, বড়দের মাঝেও জনপ্রিয়তা লাভ করছে নরম, তুলতুলে খেলনা—যেমন, টেডি বিয়ার, পুতুল কিংবা অন্য যেকোনো আকৃতির আরামদায়ক বস্তু।
বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষজন তাদের শৈশবের স্মৃতিকে তাজা রাখতে অথবা মানসিক শান্তির জন্য এইসব খেলনা সংগ্রহ করছেন। বাজার গবেষণা সংস্থা ‘সারকানা’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে খেলনার বাজারে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি খেলনার বিক্রি ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
এই খেলনাগুলো শুধু খেলার জন্য নয়, বরং অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে মানসিক শান্তির প্রতীক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের খেলনার প্রতি আকর্ষণ আসলে আমাদের ভেতরের ‘ছোট্ট আমি’কে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা। বর্তমানের অস্থির জীবনযাত্রায়, যখন চারপাশে অনিশ্চয়তা, তখন এই খেলনাগুলো আমাদের পরিচিত আরামের অনুভূতি এনে দেয়।
নস্টালজিয়া বা পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ আমাদের মানসিক শান্তির জন্য খুব দরকারি। খেলনাগুলো যেন সেই শান্তির আশ্রয়স্থল।
তবে, এই প্রবণতা শুধু আরাম বা নস্টালজিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমান সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কর্মব্যস্ত জীবন থেকে একটু বিরতি নিতে, নিজেদের ভালো রাখতে, এবং শৈশবের আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর প্রতিফলন দেখা যায়, যেখানে মানুষজন তাদের পুরোনো দিনের শখগুলো নতুন করে খুঁজে বের করার কথা বলছেন।
এই পরিবর্তনের পেছনে আরও একটি কারণ থাকতে পারে। সমাজের কিছু প্রচলিত ধারণা, যেমন—প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অর্থ সব ধরনের “ছেলেমানুষি” ত্যাগ করা—এগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে।
অনেকেই এখন তাদের ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং সমাজের চাপকে উপেক্ষা করে নিজের ভালো থাকার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। খেলনা সংগ্রহ করা তাদের সেই ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ।
বাংলাদেশেও এই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা না গেলেও, বিশ্বায়নের এই যুগে এ ধরনের সংস্কৃতির আগমন নতুন কিছু নয়।
আমাদের দেশেও মানুষজন তাদের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত জিনিস, যেমন—মাটির পুতুল, কাঠের ঘোড়া, কিংবা অন্য কোনো খেলনা—সংগ্রহ করতে পারেন।
এগুলো একদিকে যেমন নস্টালজিয়াকে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনই বর্তমান সময়ের কঠিন বাস্তবতায় কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি যোগায়।
সুতরাং, নরম খেলনার প্রতি এই আকর্ষণ আসলে জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে—ছোট থেকে বড়—আনন্দ এবং শান্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যারা নিজেদের ভালো রাখতে চান, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ উপায় হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন