হাড়ক্ষয় রোগ (Osteoporosis): বয়স্কদের নীরব ঘাতক
হাড়ক্ষয়, বা অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis), একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যা সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এটি হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করে এবং হাড় দুর্বল করে তোলে, ফলে সামান্য আঘাতেই তা ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮৯ লক্ষ ফ্র্যাকচার বা হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, যার মূল কারণ এই অস্টিওপোরোসিস।
অস্টিওপোরোসিসের কারণ:
অস্টিওপোরোসিস হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে, যা এর প্রধান কারণ। মহিলাদের মেনোপজের পরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, কম ওজনের অধিকারী হওয়া, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, এবং কিছু রোগের কারণেও এই রোগ হতে পারে।
হাড়ক্ষয় রোগের ঝুঁকির কারণগুলো হলো:
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- লিঙ্গ: মহিলাদের ঝুঁকি বেশি।
- শারীরিক গঠন: কম ওজনের ব্যক্তিরা ঝুঁকিতে থাকেন।
- পারিবারিক ইতিহাস: যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
- জীবনযাত্রা: ধূমপান ও মদ্যপান হাড়ের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- অন্যান্য রোগ: কিছু রোগ, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid arthritis), এই ঝুঁকি বাড়ায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়:
১. খাদ্য ও পুষ্টি:
- ক্যালসিয়াম: হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। দুধ, দই, পনির, সবুজ শাকসবজি, এবং ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
- ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস। বাংলাদেশে সারা বছরই পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়, তাই প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকার চেষ্টা করা উচিত। ভিটামিন ডি এর জন্য ডিম, মাছ এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
২. ব্যায়াম:
- নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। ওজন বহনকারী ব্যায়াম (Weight-bearing exercises) যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, এবং হালকা ওজন তোলার মতো ব্যায়াম খুবই উপকারী।
- ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম: বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ব্যালেন্স বা ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ, যা পড়ে যাওয়া এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যোগা, তাই চি, এবং পাইলেটস এর মতো ব্যায়ামগুলো এক্ষেত্রে সহায়ক।
রোগ নির্ণয়:
- হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ: সাধারণত, একটি ডেক্সা স্ক্যান (DEXA scan) এর মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব মাপা হয়। এটি কোমর ও মেরুদণ্ডের হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়।
- ফ্র্যাকচার ঝুঁকি মূল্যায়ন: একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রার ধরন ও পারিবারিক ইতিহাস বিবেচনা করে রোগের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়।
চিকিৎসা:
- ওষুধ: অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে বা নতুন হাড় গঠনে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।
- হরমোন থেরাপি (HRT): মেনোপজের পরে মহিলাদের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
উপসংহার:
অস্টিওপোরোসিস একটি গুরুতর সমস্যা, তবে এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলে এই রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে, দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান