যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার বৈধ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও, ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের অবৈধভাবে আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবীরা বলছেন, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ি, গাড়ি এবং নিয়মিত অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করছে। এরপর তাদের মাসের পর মাস কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে, যদিও আইন তাদের আটকের অনুমতি দেয় না।
এই বিষয়ে আইনজীবীদের সংগঠন ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক সিরিন শেবায়া বলেন, “আমি অনেক খারাপ নীতি দেখেছি, দেখেছি সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার। কিন্তু আইনি মানদণ্ড অনুসরণ না করা এবং কোনো কারণ ছাড়াই মানুষকে টার্গেট করার মতো ঘটনা আগে দেখিনি।”
যুক্তরাষ্ট্রে আটক হওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (টিপিএস) রয়েছে। এই বিশেষ মর্যাদা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্প সময়ের জন্য থাকার এবং ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার সুযোগ দেয়। সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিরতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যারা নিজ দেশে ফিরতে পারেন না, তাদের এই সুরক্ষা দেওয়া হয়।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো তার সমালোচকদের বন্দী করছেন এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন। দেশটির অধিকাংশ নাগরিক ভীতি ও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই কারণে প্রায় ৮০ লক্ষ ভেনেজুয়েলার নাগরিক তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
যদিও বেশিরভাগ ভেনেজুয়েলার অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থী প্রতিবেশী লাতিন আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে, তবে সম্প্রতি অনেকে উত্তর দিকে, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাদের নিজ দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতি না থাকায়, মার্কিন সরকার তাদের টিপিএস পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু বাইডেন প্রশাসন এই সুরক্ষা বাড়ানোর পর, ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ক্রিস্টি নোয়েম দ্রুত এটি বাতিল করার চেষ্টা করেন। এর ফলে, যারা বর্তমানে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারা বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যান এবং তাদের অবৈধভাবে আটক করা হতে থাকে।
আদালতে এই বিষয়ে শুনানির মাঝেই, ট্রাম্প প্রশাসন টিপিএস আছে এমন ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে এবং তাদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর হেফাজতে রাখে। যদিও আইনে বলা আছে, টিপিএস আছে এমন কাউকে তার অভিবাসন অবস্থার কারণে আটক করা যাবে না।
কেন অভিবাসন কর্মকর্তারা এই বৈধ অভিবাসীদের ওপর নজর রাখছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন যদি ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের টিপিএস বাতিল করে, তাহলে ব্যাপক বিতাড়নের প্রস্তুতি হিসেবে এই কাজ করছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন আইন ও নীতি কেন্দ্রের সহ-পরিচালক আহিলান টি. আরুলানানথাম বলেন, “আমার মনে হয়, এটা বলা কঠিন যে এখানে যা ঘটছে তা কোনো সুসংগঠিত নীতির ফল, নাকি কিছু কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতা।”
ভার্জিনিয়া, নিউ ইয়র্ক, টেক্সাস এবং নিউ মেক্সিকোতে টিপিএস আছে এমন ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের আটকের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও ছিল না। এমনকি একজন ব্যক্তি আইস-এর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন এবং তাকে ছয় সপ্তাহ আটক করে রাখা হয়।
আটককৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলায় কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও কোনো অপরাধ করেননি। তবে তার শরীরে মায়ের এবং মেয়ের নাম খোদাই করা ট্যাটু ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই ট্যাটুর কারণেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আসেন এবং তাকে একটি অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
টেক্সাসের এল পাসোর লাস আমেরিকাস ইমিগ্র্যান্ট অ্যাডভোকেসি সেন্টারের আইনজীবী জোয়ে বোম্যান বলেন, “ভেনেজুয়েলার পুরুষদের টিডিএ (ট্রেন দে আরাগুয়া) সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তাদের সন্ত্রাসী বলছেন। তারা দেখাতে চাইছে যে তাদের চোখে কারো স্ট্যাটাস কোনো বিষয় নয়—তারা যে কাউকে আটক করতে পারে।”
আদালতের আদেশে ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হলেও, তাকে এখনো একটি অ্যাঙ্কেল মনিটর পরতে হচ্ছে। তিনি জানান, মনিটরটি ঠিকমতো কাজ না করলেও, সরকারি অফিসে তা ঠিক করতে গেলে আবার আটকের শিকার হতে পারেন, এই ভয়ে তিনি সেখানেও যেতে পারছেন না।
ডিসি এলাকার একটি দম্পতিকে দুবার গ্রেপ্তার করা হয়—একবার তাদের বাড়িতে এবং আরেকবার গাড়িতে। উভয়বারই তাদের সন্তানদের সামনে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগ আনে।
ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্টের শেবায়া বলেন, “আমরা যা দেখছি, তা হলো আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা। আমাদের সমাজ এবং আদালতের ওপর নির্ভর করতে হবে, যাতে তারা এই প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে এবং বলতে পারে, ‘আপনারা কোনো এজেন্ডা অনুসরণ করলেও, কিছু আইনি সীমা আছে যা অতিক্রম করা যায় না।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান