প্যারিসের একটি আকর্ষণীয় ফ্ল্যাট, যেখানে রং আর নস্টালজিয়ার এক অপূর্ব মেলবন্ধন
প্যারিসের ১৭তম আ্যরন্ডিসমেন্টে অবস্থিত একটি ক্লাসিক হাউসম্যানিয়ান (Haussmannian) বিল্ডিং-এ বাস করেন টিফেইন ভেরডিয়ার। তিনি একজন ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর এবং আসবাবপত্র ডিজাইনার। তাঁর এই ফ্ল্যাটটি যেন এক রঙিন ক্যানভাস, যেখানে রং আর সৃজনশীলতার এক দারুণ খেলা চলে।
সাদামাটা দেয়ালের পরিবর্তে সাহসী সব রঙ ব্যবহার করে তিনি ফ্ল্যাটটিকে সাজিয়েছেন, যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
টিফেইন যখন প্রথম এই ফ্ল্যাটে আসেন, তখন চারপাশের সাদা দেয়ালগুলো দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, যেন এটা একজন মিনিমালিস্টের স্বপ্নপূরণ—কিন্তু তাঁর ভাষায়, একজন কালার-প্রেমীর দুঃস্বপ্ন! টিফেইন জানান, “তখন দেয়ালগুলো একদম সাদা ছিল।”
কিন্তু একজন অভিজ্ঞ ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর হিসেবে তিনি ফ্ল্যাটের গঠনশৈলীর সম্ভাবনাটা বুঝতে পেরেছিলেন। “আমার মনে হয়েছিল, এটা যেন আকাশের উপরে একটা বাড়ি, যেখানে দিন এবং রাতের স্থানগুলো আলাদা করা হয়েছে।”
সাহসী ডিজাইন এবং রঙের প্রতি ভালোবাসাই টিফেইনের মূল পরিচয়। তাঁর মতে, “অনুভূতি প্রকাশ করার সেরা উপায় হলো রং ব্যবহার করা। এগুলো এক একটি বিশেষ এবং আসল পরিবেশ তৈরি করে।”
তাঁর সবচেয়ে প্রিয় স্থান, বসার ঘরটি দেখলে এই কথাগুলো আরও স্পষ্ট হয়। তিনি জানান, “এই ঘরটি সাজানোর সময় আমি উষ্ণ এবং আরামদায়ক একটা পরিবেশ চেয়েছিলাম।”
এর ফলস্বরূপ, স্যালমন পিঙ্ক এবং উজ্জ্বল হলুদ রঙের মিশ্রণে ঘরটি উষ্ণতায় ভরে উঠেছে। এই ঘরটি যেন টিফেইনের ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি: চঞ্চল, মেয়েলি এবং কিছুটা নস্টালজিক।
এখানে আলকি (Alki) কোম্পানির তৈরি ফুশিয়া-গোলাপি রঙের আরাম কেদারা, ইতালীয় ডিজাইনার উইলি রিজো (Willy Rizzo)-এর ডিজাইন করা সেন্টার টেবিল এবং এইচকে লিভিং (HK Living)-এর ঝাড়বাতি ব্যবহার করা হয়েছে।
কার্ভড ফ্লোর ল্যাম্পটি তিনি একটি পুরনো বাজার (flea market) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
পাশের ডাইনিং রুমে রয়েছে লেস কজুজ (Les Causeuses) ব্র্যান্ডের তৈরি গোলাপী রঙের মার্বেল টেবিল এবং উইলি রিজোর ডিজাইন করা চেয়ার। এছাড়া, পুরনো একটি সোফা, যা টিফেইনের পরিবারের ঐতিহ্য, সেটিকে নতুন করে সাজিয়েছেন তিনি।
তাঁর সংগ্রহে থাকা অনেক আসবাবপত্রই পুরনো বাজার থেকে কেনা।
রান্নাঘরে রয়েছে একটি পুরনো জাপানিজ ক্যাবিনেট, যা টিফেইন নিজেই নতুন করে সাজিয়েছেন। এছাড়া, মার্টিন জেরি (Martin Jarry)-র আঁকা ফুলের ছবি ঘরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বেডরুমের আরামদায়ক এবং ক্লাসিক পরিবেশের জন্য টিফেইন বেছে নিয়েছেন পুরনো দিনের বেড-লিলেন, একটি পেইন্টিং (যা পুরনো বাজার থেকে সংগ্রহ করা) এবং ১৯৩০ সালের একটি ফ্লোর ল্যাম্প।
আধুনিকতার ছোঁয়া হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন এটসিতে (Etsy) পাওয়া বেডসাইড ল্যাম্প এবং লেস কজুজের তৈরি বড় একটি আয়না।
টিফেইন আট বছর লন্ডনে কাটিয়েছেন। সেখানকার সংস্কৃতি তাঁর কাজে এনেছে এক ভিন্নতা। তিনি বলেন, “একজন ফরাসি হিসেবে লন্ডনে থাকার কারণে, আমি ব্রিটিশদের বিশেষত্বকে আমার ডিজাইন-এর একটি অংশে পরিণত করেছি।”
তাঁর কাজে সাহসী নকশা এবং বিচিত্র উপাদান ব্যবহারের মধ্যে সেই প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়।
টিফেইন তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড লেস কজুজের মাধ্যমে প্যারিস এবং তার বাইরেও ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।
লেস কজুজ মূলত পুরনো দিনের ডিজাইন এবং কারুশিল্পের প্রতি উৎসর্গীকৃত। এই ব্র্যান্ডের মূল লক্ষ্য হলো আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করা এবং নৈতিকভাবে উৎপাদিত আসবাবপত্র তৈরি করা।
বাতি, আরাম কেদারা এবং কুশন সহ প্রতিটি পণ্য পর্তুগালে তৈরি করা হয়, যেখানে “খেলার ছলে নান্দনিকতা” এবং উচ্চ মানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
ছোটবেলা থেকেই জাদুঘর, পুরনো বাজার এবং অ্যান্টিক বইয়ের প্রতি টিফেইনের আকর্ষণ ছিল। ফ্যাশন ডিজাইন থেকে আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করাটা তাঁর জন্য স্বাভাবিক ছিল।
তাঁর বাড়িটি যেন সেই অভিজ্ঞতারই প্রতিচ্ছবি, যেখানে শিল্প ও প্রাচীন জিনিসের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়।
ফুলের নকশা করা চেয়ার থেকে শুরু করে পুরনো দিনের আলো—প্রতিটি জিনিস টিফেইনের রুচির পরিচয় বহন করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান