বিশ্বের বৃহত্তম খ্রিস্টান মিশনারি সংস্থা ‘ইউথ উইথ আ মিশন’ (YWAM)-এর বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। সংগঠনটির প্রাক্তন সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের একাংশ জানিয়েছেন, সেখানে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাদের। তাদের অভিযোগ, নিজেদের ‘পাপ’ স্বীকার করতে বাধ্য করা হত, এমনকি সমকামিতাকে ‘চিকিৎসা’ করার নামে চালানো হত নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান।
অভিযোগগুলি মূলত গত দুই দশকের, এবং বিভিন্ন দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ইয়ুথ উইথ আ মিশনে যুক্ত তরুণ-তরুণীদের প্রায়ই জনসমক্ষে নিজেদের ‘পাপ’ স্বীকার করতে চাপ দেওয়া হত। এই ‘পাপ’-এর তালিকায় ছিল সমকামিতার চিন্তা, যৌন সম্পর্ক, গর্ভপাত এবং পর্নোগ্রাফি দেখা। এছাড়া, নেতাদের কথা না শোনা বা বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করাকেও ‘পাপ’ হিসেবে গণ্য করা হতো। যারা তাদের ‘পাপ’ স্বীকার করতেন, তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হত।
কখনো কখনো তাদের স্বেচ্ছাসেবকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো।
সংস্থাটির প্রাক্তন স্বেচ্ছাসেবকদের বয়ান অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ছিল। তাদের দাবি, বিবাহ-বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারীদের ‘শয়তান তাড়ানোর’ মতো আচার-অনুষ্ঠান করতে বাধ্য করা হতো।
একজন প্রাক্তন ব্রিটিশ কর্মী জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে এক ব্যক্তি সমকামিতার কথা স্বীকার করার পর তার উপর হাত রেখে প্রার্থনা করা হয় এবং ‘সমকামিতার আত্মা’ দূর করার জন্য মন্ত্র পাঠ করা হয়। ওই ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তার মনে হয়েছিল, যেন তার মধ্যে ‘শয়তান’ বাস করছে।
এই ধরনের ঘটনাগুলো ইয়ুথ উইথ আ মিশনের কিছু কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের একটি অংশ ছিল। কর্মীদের পোশাকের উপর নিয়ন্ত্রণ, প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করতে বাধা এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও ছিল বিধিনিষেধ।
অনেক সময় নেতারা তাদের নির্দেশকে ঈশ্বরের নির্দেশ হিসেবে তুলে ধরতেন। এক প্রাক্তন মিশনারি জানিয়েছেন, “তারা সবসময় অন্যদের ইচ্ছাকে নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করত এবং বলত, ‘আমার মনে হয়, ঈশ্বর এটা বলছেন’।
এটা ছিল মানুষকে প্রভাবিত করার একটা কৌশল।”
জানা গেছে, ইয়ুথ উইথ আ মিশন প্রায় ১৮০টি দেশে কাজ করে এবং প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে স্বল্পমেয়াদী মিশনে পাঠায়। ১৯৬০ সালে আমেরিকান মিশনারি লরেন কানিংহাম এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে এর প্রধান কেন্দ্রগুলো রয়েছে। যুক্তরাজ্যে এটি একটি নিবন্ধিত দাতব্য সংস্থা হিসেবে কাজ করে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং ভালো থাকার বিষয়ে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, তারা স্বীকার করেছে যে, কিছু সদস্যের খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
তারা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ইয়ুথ উইথ আ মিশন বর্তমানে তাদের কার্যক্রমের মানোন্নয়নে কাজ করছে এবং তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যে ইয়ুথ উইথ আ মিশনের সঙ্গে যুক্ত একটি প্রার্থনা আন্দোলনের প্রচার দেখা গেছে, যার লক্ষ্য হলো তরুণদের মিশনারি কাজে আকৃষ্ট করা।
এই প্রেক্ষাপটে, ইয়ুথ উইথ আ মিশনের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান