যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশে জরুরি খাদ্য সহায়তা পুনর্বহাল করলেও, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে তা বহাল রাখেনি। এই দুটি দেশেই লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনে মানবিক সংকট তীব্র। কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যের কারণে সেখানকার মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত সেখানকার মানুষের জীবন আরও কঠিন করে তুলবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে এক ডজনেরও বেশি দেশে খাদ্য সহায়তার প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের ফলে লাখ লাখ মানুষ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে এবং নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme) জানিয়েছে, তারা জানতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ১৪টি দেশে জরুরি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করে দিচ্ছে। তবে পরে জানা যায়, সোমালিয়া, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক ও ইকুয়েডরের জন্য খাদ্য সহায়তা পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে, অন্যান্য ৬টি দেশের বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে আফগানিস্তান ও ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। আফগানিস্তানে, কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক মানবিক তহবিলের ৪৩ শতাংশ সরবরাহ করেছিল।
আফগানিস্তানে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সেখানকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, মা ও গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যাবে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের কারণে সেখানকার মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের জন্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৪ সাল থেকে। হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ দেশটির উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে ইয়েমেনের প্রায় ২৪ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত ১ লক্ষাধিক শিশুর স্বাস্থ্যসেবাও বন্ধ হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা (International Rescue Committee) জানিয়েছে, তাদের কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে শিশুদের জন্য খাদ্য সহায়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সেলিং পরিষেবা দেওয়া হয়। সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে এই সুবিধাগুলো থেকে অনেক মানুষ বঞ্চিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে আফগানিস্তান ও ইয়েমেনের মানুষ খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে, যা তাদের জীবন আরও কঠিন করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস