যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগে (Immigration and Customs Enforcement – ICE) পরিচালক টড লায়ন্স সম্প্রতি অভিবাসন বিতাড়ন প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত করার প্রস্তাব করেছেন। তিনি এই বিতাড়ন প্রক্রিয়াকে অ্যামাজনের পণ্য ডেলিভারির মতো ‘ব্যবসা’ হিসেবে দেখতে চান।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিতাড়ন প্রক্রিয়াটি অ্যামাজন প্রাইমের (Amazon Prime) মতো দ্রুত ও কার্যকর করা উচিত।
এ নিয়ে চলতি বছর অনুষ্ঠিত ২০২৫ বর্ডার সিকিউরিটি এক্সপোতে (Border Security Expo) অন্যান্য ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যও সংবাদ শিরোনামে এসেছে। সেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বর্ডার czar’ টম হোমান এবং মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নয়েমও বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিতাড়িত করতে এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের (Alien Enemies Act) ব্যবহারের প্রশংসা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি-আমেরিকানদের বন্দী করার জন্য এই আইন ব্যবহার করা হয়েছিল।
হোমান জানান, এই আইনটি কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত হয়েছে এবং তারা এটি ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, বিচারকরা যখন এই আইন প্রয়োগে বাধা দেন, তখন তিনি ‘বিচলিত’ হন। পারিবারিক আটকের বিষয়টিও তাদের নীতিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পরিচালক লায়ন্স বিতাড়ন প্রক্রিয়ায় নতুন প্রযুক্তির সম্ভাব্য ব্যবহারের বিষয়েও কথা বলেছেন। তিনি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (Artificial Intelligence – AI) ব্যবহারের মাধ্যমে অভিবাসীদের দ্রুত বিতাড়িত করার আশা প্রকাশ করেন।
এর ফলে আটক রাখার স্থান (bed space) খালি করা এবং বিমানের সিট পূরণ করা সহজ হবে।
এছাড়াও, ভোটারদের জালিয়াতি শনাক্ত করতে সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর (social security numbers) ব্যবহারের জন্য তিনি ইলন মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র (Doge) সঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান।
এদিকে, হোমানসহ বেশ কয়েকজন বক্তা বিতাড়ন প্রক্রিয়াকে একটি ব্যবসার মতো করে চালানোর পক্ষে মত দেন। তারা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন গণহারে বিতাড়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল।
অনুষ্ঠানে সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের অনেক প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ব্যাপক বিতাড়নের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তথ্য অনুসারে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম চার সপ্তাহে আইস-এর (ICE) অভিযানে প্রায় ১,৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বর্তমানে, আইনি বৈধতা নেই এমন সকল অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, এমনকি যারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, অ্যাভেলো এয়ারলাইন্স (Avelo Airlines) ঘোষণা করেছে যে তারা মে মাস থেকে ফেডারেল বিতাড়ন ফ্লাইট পরিচালনা করতে প্রস্তুত। তবে, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েক হাজার মানুষ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে ফ্লাইট বাতিলের আবেদন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিতাড়ন নিয়ে অভিবাসী এবং বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও ভীতি বাড়ছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফ্লাইট বুকিং ৭০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
গণহারে বিতাড়নের কারণে পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এবং অভিবাসী সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান