জার্মানিতে নতুন সরকার: সংকট মোকাবিলায় জোট বাঁধছে রক্ষণশীল ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা।
জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা কাটিয়ে অবশেষে সরকার গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (CDU) ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (CSU) এবং মধ্য-বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি (SPD) জোট সরকার গঠনে রাজি হয়েছে। এই জোটের ফলে চরম ডানপন্থী দলের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা আপাতত রুখে দেওয়া গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জার্মানির অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের মতো বিষয়গুলো মোকাবিলায় এই জোট সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নতুন সরকারের রূপরেখা: ‘জার্মানির জন্য দায়িত্ব’
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে সরকার গঠনে দলগুলোকে সমঝোতায় আসতে হয়েছে।
উভয় দলের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা ১৪৬ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত রূপরেখা।
এই রূপরেখার মূল বিষয়গুলো হলো—
নতুন চ্যান্সেলর কে?
এই জোট সরকারে চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ফ্রেডরিখ মের্ৎস এর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রাক্তন চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মে মাসের শুরুতে তিনি চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নিতে পারেন।
তবে, সরকার গঠনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।
এসপিডি’র প্রায় সাড়ে তিন লাখ সদস্যের অনলাইন ভোটের মাধ্যমে এবং সিডিইউ ও সিএসইউ নেতৃত্বের অনুমোদনের পরেই সরকার গঠনের পথ সুগম হবে।
অভিবাস নীতি: বিতর্কের কেন্দ্রে
সরকার গঠনের আলোচনায় অভিবাসন নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের কারণে বিভিন্ন হামলার ঘটনা ঘটায় এই ইস্যুতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ফ্রেডরিখ মের্ৎস বলেছেন, সরকার অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করতে এবং সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবে।
অন্যদিকে, এসপিডি’র নেতারা বলেছেন, আশ্রয়গ্রহণের মৌলিক অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা হবে।
তারা মনে করেন, জার্মানি একটি অভিবাসন-বান্ধব দেশ এবং নতুন আসা মানুষেরা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে অবদান রাখে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
জার্মানিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছিল।
গত নভেম্বরে এসপিডি’র নেতৃত্বে গঠিত জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পর দ্রুত নির্বাচনের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
নির্বাচনে সিডিইউ/সিএসইউ ২৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিল।
তবে, অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন ও রুশপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (AfD) ২০.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো চরম ডানপন্থী দল এত বেশি ভোট পেল।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
জার্মানি বর্তমানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাও দেশটির জন্য উদ্বেগের কারণ।
ফ্রেডরিখ মের্ৎস ইউক্রেনের প্রতি জার্মানির সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ফ্রান্স ও পোল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কথা বলেছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতেও আগ্রহী।
জার্মানিতে সরকার গঠনের এই প্রক্রিয়া শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, জার্মানি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান