যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় শিশু শিল্পী মিসেস র্যাচেলকে (Rachel Griffin Accurso) ফিলিস্তিনের গাজায় শিশুদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর কারণে দেশটির বিচার বিভাগের তদন্তের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে একটি ইসরায়েলপন্থী সংগঠন। ওই সংগঠনের অভিযোগ, মিসেস র্যাচেলের এই ধরনের পোস্টগুলো বিদেশি কোনো পক্ষের হয়ে প্রচারণার অংশ হতে পারে।
সম্প্রতি, ‘স্টপ অ্যান্টিসেমিটিজম’ নামের সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে তারা জানতে চেয়েছে, মিসেস র্যাচেল, যিনি শিশুদের জন্য ‘সংগস ফর লিটলস’ (Songs for Littles) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান, তিনি গাজায় শিশুদের দুর্দশা নিয়ে পোস্ট করার মাধ্যমে বিদেশি কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করছেন কিনা।
সংগঠনটির পরিচালক লিয়োরা রেজ নিউ ইয়র্ক পোস্টকে বলেছেন, “আমরা মনে করি, কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিদেশি অর্থায়নে যে প্রচারণা চালানো হয়, অনলাইন প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটছে।”
মিসেস র্যাচেল-কে প্রায়ই ‘আধুনিক যুগের মিস্টার রজার্স’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। তার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলো ১০ বিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছে। বর্তমানে ৪২ বছর বয়সী র্যাচেল, যিনি পেশায় একজন শিক্ষিকা, সম্প্রতি সারোগেসির মাধ্যমে দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছেন।
‘স্টপ অ্যান্টিসেমিটিজম’ বিশেষভাবে আপত্তি জানিয়েছে মিসেস র্যাচেলের কিছু পোস্টের ওপর, যেখানে তিনি গাজার শিশুদের অপুষ্টির ছবি এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হতাহতের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। সংগঠনটির অভিযোগ, মিসেস র্যাচেল ইসরায়েলি ভুক্তভোগী, জিম্মি ও শিশুদের দুঃখকষ্টের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
সংগঠনটি ‘ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’ (FARA)-এর অধীনে এই তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এই আইনের অধীনে, বিদেশি সরকার বা রাজনৈতিক সত্তার হয়ে কাজ করা মার্কিন নাগরিকদের বিদেশি এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধিত হতে হয়। তবে, হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
এক্ষেত্রে FARA-র প্রয়োগ আইনগতভাবে সঠিক নাও হতে পারে, কারণ হামাসের প্রতি সমর্থন সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আসে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ১৫ মাসের যুদ্ধে (জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত) হাজার হাজার শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে অথবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের মতে, গাজায় শনাক্ত হওয়া ৪০,৭১৭ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে ১৩,৩১৯ জনই শিশু।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২৫,০০০ শিশু আহত হয়েছে। এছাড়া, ‘এডুকেশন ক্যানট ওয়েট’-এর নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন শেরিফ জানিয়েছেন, ৬,৫০,০০০ স্কুলগামী শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
মিসেস র্যাচেল-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশুর ছবি শেয়ার করেছেন, যা গাজার মানবিক সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘স্টপ অ্যান্টিসেমিটিজম’-এর দাবি, ছবিগুলো মিথ্যা প্রমাণ করা হয়েছে এবং শিশুটি অপুষ্টির পরিবর্তে সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic fibrosis) রোগে আক্রান্ত ছিল।
যদিও ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, শিশুর মা নিশ্চিত করেছেন, তার ছেলে এই দুটি রোগেই ভুগছিল।
মিসেস র্যাচেল এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, তিনি এর আগে বলেছিলেন, গাজায় বিমান হামলায় আহত একটি শিশুর ভিডিও দেখার পর তিনি শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, “কোনো শিশুরই এমন ভয়, আতঙ্ক আর আঘাত পাওয়ার অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত নয়।”
গত মে মাসে মিসেস র্যাচেল ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর জরুরি তহবিলের জন্য একটি ফান্ডরেইজারের আয়োজন করেন, যা গাজাসহ বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের শিশুদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ছিল। এই ফান্ডরেইজারের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৫২,০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ কোটি টাকা) সংগ্রহ করা হয়।
মিসেস র্যাচেল তার একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছিলেন, “আমি সকল শিশুর প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল। ফিলিস্তিনি শিশু, ইসরায়েলি শিশু, যুক্তরাষ্ট্রের শিশু—মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান—সব দেশের সব শিশুর প্রতি আমার ভালোবাসা রয়েছে। বর্তমানে খাদ্য ও পানি না পাওয়া, নিহত হওয়া শিশুদের জন্য ফান্ড তৈরি করা মানবিকতার পরিচয়।”
প্রসঙ্গত, ‘স্টপ অ্যান্টিসেমিটিজম’ নামের সংগঠনটি তাদের ওয়েবসাইটে ‘সাপ্তাহিক ইহুদিবিদ্বেষী’ তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তালিকায় গাজার সাংবাদিক বিসান ওদ, জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, র্যাপার ম্যাকেলমোর এবং অভিনেতা জেসি উইলিয়ামস-এর নামও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান