একুয়েডরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব, ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়ার ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের’ কৌশল নিয়ে বিতর্ক চলছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের জন্ম দিয়েছে।
আগামী রবিবার অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেজের সঙ্গে নোবোয়ার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে গঞ্জালেজকে পরাজিত করেন নোবোয়া। ১৩.৭ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে মাত্র ০.১৭ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন তিনি।
নির্বাচনের ফল নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। জনমত জরিপে দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নোবোয়া নির্বাচিত হওয়ার পর মাদক পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি ‘অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত’ ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর ওপর এই অভিযানের দায়িত্ব দেন।
যদিও অপরাধ কিছুটা কমেছিল, তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ে। এমনকি, দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ হারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
গুয়াকিলের দরিদ্র এলাকা সোসিও বিভিয়েন্ডা-২ তে সম্প্রতি গ্যাংদের মধ্যে সংঘর্ষে ২২ জন নিহত হয়। সেখানকার বাসিন্দা মারিয়া জানান, “পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ।
আমরা রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, আইনের শাসন নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “অনেক বাসিন্দা এখনও ঘরবাড়িতে ফিরতে পারেনি, কারণ সেখানে এখনো লড়াই চলছে।
শুধু সহিংসতা নয়, নোবোয়ার জনপ্রিয়তা কমার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউট হচ্ছে।
দেশের জিডিপি ১.৫ শতাংশ কমেছে এবং দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। মারিয়ার মতে, “জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
দিনে একবার খাবার জোটে, আবার বাচ্চাদের জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আমরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই।
অর্থনৈতিক ও নীতি গবেষণা কেন্দ্রের (সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ) জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নোবোয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাতিয়াস আবাদ মার্চান বলেন, “নোবোয়া স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকলেও, ভোটারদের মধ্যে তার বিরুদ্ধে একটি ছোট অংশ তৈরি হয়েছে, যারা মনে করে প্রেসিডেন্টের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণ প্রবণতা রয়েছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনে জেতার জন্য বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছেন নোবোয়া। তিনি বিতর্কিত নিরাপত্তা সংস্থা ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্সের সঙ্গে একটি ‘কৌশলগত জোট’ করেছেন।
এমনকি, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ১৪ জন ডেমোক্রেট সদস্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনে হারলে নোবোয়া ফল নাও মানতে পারেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান