পারকিনসন’স রোগ সনাক্তকরণে নতুন রক্ত পরীক্ষা: দ্রুত রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা
চিকিৎসা বিজ্ঞান এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। গবেষকরা এমন একটি সহজ এবং কার্যকরী রক্ত পরীক্ষার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা পারকিনসন’স রোগ (Parkinson’s disease) সনাক্ত করতে সাহায্য করবে, এমনকি রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই।
এই আবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার মানুষ পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত। মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এই রোগ হয়।
এর ফলে ‘ডোপামিন’ নামক রাসায়নিকের উৎপাদন কমে যায়, যা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নতুন এই রক্ত পরীক্ষাটি মূলত ট্রান্সফার আরএনএ (tRNA) এর ক্ষুদ্র অংশ বিশ্লেষণ করে। এই আরএনএ-র কিছু বিশেষ উপাদান পারকিনসন’স রোগীদের শরীরে জমা হয়।
এছাড়াও, পরীক্ষার মাধ্যমে মাইটোকন্ড্রিয়াল আরএনএ-র (mitochondrial RNA) পরিমাণও দেখা হয়, যা রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে হ্রাস পেতে থাকে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে খুব দ্রুত, সহজে এবং নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
সবচেয়ে বড় কথা হল, এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরীক্ষার ফলাফল বিদ্যমান অন্যান্য পরীক্ষার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
একটি স্কেলে, যেখানে ১ স্কোর নির্দেশ করে পরীক্ষার নিখুঁত ফল এবং ০.৫ স্কোর হলে তা কোনো কাজে আসে না, সেখানে এই পরীক্ষার স্কোর ছিল ০.৮৬।
বর্তমানে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে যে পরীক্ষাগুলো করা হয়, সেগুলোর স্কোর ০.৭৩।
এই পরীক্ষাটি করতে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (PCR) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা কোভিড পরীক্ষার সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে ডিএনএ-এর উপাদানকে বৃদ্ধি করা হয়, যা রোগ সনাক্তকরণে সহায়ক।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারমোনা সোরেক, যিনি এই গবেষণার তত্ত্বাবধান করেছেন, বলেছেন, “এই আবিষ্কার পারকিনসন’স রোগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও উন্নত করবে এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি সহজ পদ্ধতি তৈরি করবে।
টিআরএফ (tRFs) এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা রোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে হওয়া আণবিক পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানতে পারছি।”
পারকিনসন’স ইউকের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ডেভিড ডেক্সটার বলেন, “এই গবেষণা পারকিনসন’স রোগের জৈবিক চিহ্নিতকারী (biological marker) অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
রক্তে এই চিহ্নিতকারী সনাক্ত করা এবং পরিমাপ করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে রোগীদের জন্য একটি উপযোগী রোগ নির্ণয় পদ্ধতি তৈরি করতে সহায়তা করবে।”
বর্তমানে, এই পরীক্ষার খরচ প্রায় ৮ হাজার টাকার (ভারতীয় মুদ্রায়)।
তবে, এটি একটি সম্ভাব্য খরচ এবং সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিম্রোদ মাদারের নেতৃত্বে। এছাড়াও, শারে জেডেক মেডিকেল সেন্টার, ইউনিভার্সিটি অফ সারে এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরাও এতে সহযোগিতা করেছেন।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে পারকিনসন’স রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ সম্ভব হলে, সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যাবে। ফলে রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব হবে।
তবে, এই পরীক্ষার কার্যকারিতা এবং অন্যান্য রোগের সাথে এর পার্থক্য নিরূপণের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান