গাজায় যুদ্ধের বিভীষিকা: একজন নারীর চোখে উদ্বাস্তু জীবনের প্রতিচ্ছবি।
গাজায় যুদ্ধ প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন, কেড়ে নিচ্ছে স্বপ্ন। এই ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে, পরিচয় সংকটে ভোগা একজন নারীর আত্মকথা যেন যুদ্ধের ভয়াবহতাকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করায়।
সম্প্রতি আল জাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গাজার ফুখারি এলাকার বাসিন্দা এক তরুণীর যুদ্ধের দিনগুলোর কথা। তিনি চান, যুদ্ধের ইতিহাসে তিনি যেন শুধু একটি সংখ্যা হয়ে না থাকেন, বরং তাঁর সংগ্রামের গল্প মানুষের মনে গেঁথে থাকে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় উদ্বাস্তু জীবন নতুন নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর কারণে তাঁর দাদা-দাদি বাস্তুচ্যুত হয়ে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সেখানেই জন্ম হয় ওই তরুণীর। এরপর ২০০০ সালে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি চান, তাঁর গল্প মানুষ মনে রাখুক।
ওই তরুণীর ভাষায়, “আমি চাই না, আমাকে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। আমার পরিচয় আছে, আমার গল্প আছে।” গাজায় অবরুদ্ধ জীবন ও ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির স্মৃতি আজও তাঁর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
তিনি জানান, কিভাবে তাঁরা বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অবশেষে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা (UNRWA)-এর সহায়তায় ফুখারিতে একটি নতুন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজার এই তরুণী সেখানকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেন। তাঁর কথায়, গাজার জীবন কখনোই সহজ ছিল না, কিন্তু এখানকার মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা রয়েছে।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, মানসিক যন্ত্রণা—এসবের সঙ্গে লড়তে লড়তে আমরা ক্লান্ত। আমরা কেবল টিকে থাকার চেষ্টা করছি।”
যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন, কিন্তু যুদ্ধের বিভীষিকা তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণভাবে এলোমেলো করে দেয়। বর্তমানে খান ইউনিস এবং রাফাহর মাঝে, ফুখারিতে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত বোমা হামলায় তিনি চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
তাঁর এলাকার অনেক পরিবার এখনো ঘর ছাড়তে রাজি নয়, কারণ উদ্বাস্তু হওয়াটা অত্যন্ত কঠিন—শারীরিকভাবে, আর্থিকভাবে এবং মানসিকভাবে।
ওই তরুণী জানান, তাঁর মনে হয়, তিনি যেন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন। সবসময় তাঁর মনে হয়, তাঁর শরীর হয়তো আর পারবে না।
তিনি চান, তাঁর বন্ধুদের মাধ্যমে তাঁর গল্প সবার কাছে পৌঁছে যাক, যাতে তিনি ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে পরিচিত না হন।
যুদ্ধ তাঁর মনোবল ভেঙে দিয়েছে। সবসময় চেষ্টা করেছেন শক্ত থাকতে, কিন্তু ভেতরের কষ্টগুলো তাঁকে দুর্বল করে দিয়েছে।
তিনি চান, তাঁর এলাকার মানুষ, বিশেষ করে যারা উত্তর গাজা থেকে এসেছেন, তাঁরা যেন আবার আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
এই যুদ্ধ তাঁর জীবনে বিভীষিকা নিয়ে এসেছে। তিনি চান, বিশ্ববাসী তাঁদের এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিক। গাজার এই তরুণী তাঁর জীবন ও ভালোবাসার কথা বলতে চান, যা যুদ্ধের নিষ্ঠুর বাস্তবতার মাঝেও টিকে থাকার সাহস জোগায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা