যুক্তরাজ্যে (UK) পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পর নিহত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গ ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে একটি যৌথ মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই মামলার সঙ্গে ইতিমধ্যে একশ জনের বেশি পরিবার যুক্ত হয়েছেন।
নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, ১৯৭০ এর দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় অথবা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এর যথাযথ বিচার হয়নি।
এই মামলার মূল ভিত্তি তৈরি হয়েছে ‘পিপলস ট্রিবিউনাল অন পুলিশ কিলিং’ নামক একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের মৃত্যুর কারণ এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এই ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত এবং অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ প্রধান এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মামলার সঙ্গে জড়িত কর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কেন ফেরো বলেন, “আমরা একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এমন যৌথ মামলা আগে কখনো হয়নি। বহু পরিবার বছরের পর বছর ধরে নীরবে কষ্ট সহ্য করে আসছেন।
আমাদের এমন কিছু করতে হবে যা সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে, নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটিই হলো এই যৌথ মামলার মূল ধারণা।”
অনুষ্ঠানটির আয়োজকদের হিসাব অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে যুক্তরাজ্যে পুলিশের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩ হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে মাত্র চারজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মামলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মাইকি পাওয়েলের বোন সিটা ল্যাম্ব্রিয়াস। ২০০৩ সালে পুলিশের হেফাজতে শ্বাসরোধ হয়ে মাইকির মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া, ১৯৯৯ সালে আটজন পুলিশ সদস্যের হাতে নিহত হওয়া রজার সিলভেস্টারের চাচাতো বোন শার্লি সিলভেস্টারও এই মামলার সঙ্গে জড়িত।
সমান্তা প্যাটারসন জানান, তার ভাই জেসন ম্যাকফারসনকে ২০০৭ সালে পুলিশ তল্লাশি করার পর তিনি মারা যান। তিনি বলেন, “আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। আন্দোলন করেছি, চিঠি লিখেছি, এমনকি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও দেখা করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
এখন কিছু একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার।”
জেসন ম্যাকফারসনের মৃত্যুর পর তার পরিবারটির ওপর গভীর প্রভাব পড়েছিল। ঘটনার পর পরই তার মা মারা যান। সমান্তা জানান, তার মায়ের বিশ্বাস ছিল, এই ঘটনার বিচার হবে, কিন্তু তিনি কিছুই পাননি।
কেন ফেরো আরও জানান, এই মামলার সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আইনজীবকদের একটি দল মামলার কাঠামো তৈরি করতে কাজ করছেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য হল, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্ষতিপূরণ আদায় করা এবং রাষ্ট্র যে তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরা।
এই মামলার মাধ্যমে বিচার চাওয়া পরিবারগুলো মনে করেন, সরকার তাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নয়। তাদের অভিযোগ, ঘটনার তদন্তের নামে সরকার এক ধরনের ‘প্রহসন’ তৈরি করেছে, যার কোনো ক্ষমতা নেই।
এই ট্রাইব্যুনাল এবং মামলার মূল উদ্যোক্তা হলো ‘ইউনাইটেড ফ্যামিলিজ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস ক্যাম্পেইন’, ‘মাইগ্রেন্ট মিডিয়া’ এবং ‘ফোরওয়ার্ডএভারইউকে’ সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, এই ধরনের অন্যায়ের ব্যাপকতা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা।
সংগঠনগুলো ‘পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু’ শব্দবন্ধটিকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এই শব্দবন্ধটি সংকীর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর, কারণ এতে যারা গ্রেপ্তার হননি বা যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তাদের মৃত্যুর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান