মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে, যা বিশ্ব মন্দার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে তাঁর দলের অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে ভিন্ন মত।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা এই শুল্ক নীতি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। কেউ বলছেন, এই শুল্ক বহাল থাকবে এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুনভাবে সাজানো হবে।
আবার কেউ বলছেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই দ্বিধা-বিভক্তিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লটনিক সিবিএস নিউজের সাথে আলাপকালে শুল্ক বহাল রাখার পক্ষে জোরালো মন্তব্য করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই শুল্ক কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্য নয়, বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর থাকবে।
অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং কৃষি সচিব ব্রুক রোলিন্স পৃথক সাক্ষাৎকারে শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা জানান, প্রায় ৫০টির বেশি দেশ শুল্ক এবং বাণিজ্য বাধা কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে।
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির কারণে শুধু মার্কিন বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, বরং রিপাবলিকান দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদও এর বিরোধিতা করছেন। গত সপ্তাহে, ওয়াল স্ট্রিটের বাজার থেকে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এমনকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এই শুল্ককে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম কর বৃদ্ধি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
নর্থ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর টম টিলিস সতর্ক করে বলেছেন, এই শুল্কের কারণে কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে। টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পরাজয় হতে পারে।
ডেমোক্র্যাটরা এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুযোগ খুঁজছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট সিনেটর অ্যাডাম শিফ মনে করেন, যদি মন্দা আসে, তাহলে এটি হবে ‘ট্রাম্পের মন্দা’।
মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ এই শুল্ককে ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুল্কের কারণে মন্দা আসার সম্ভাবনা বাড়ছে। জেপি মরগানের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রধান ব্রুস কাসম্যান বৈশ্বিক মন্দা আসার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
বিল ক্লিনটনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামারস এই শুল্ককে ‘অর্থনীতিতে নিজেদের তৈরি করা সবচেয়ে বড় ক্ষত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্কের কারণে মার্কিন ভোক্তাদের প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে, যা গ্যাসোলিনের দাম দ্বিগুণ করার সমান।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজারের অস্থিরতা কমাতে নানা ধরনের বক্তব্য রাখছেন। তবে তাঁদের বক্তব্যে অনেক সময় অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মকর্তা যখন অ্যান্টার্কটিকার কাছে অবস্থিত হিয়ার্ড দ্বীপ এবং ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপপুঞ্জে শুল্ক আরোপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর উত্তর ছিল বেশ অসংলগ্ন।
এই শুল্ক নীতি এবং এর প্রতিক্রিয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অর্থনীতিবিদদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান