ফ্রান্সের রাজনীতিতে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মারিন লে পেন। দেশটির চরম ডানপন্থী এই নেত্রী আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সরকারি তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি প্যারিসে এক জনসভায় লে পেন এই রায়কে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই সিদ্ধান্ত ‘তাঁর দেশ, তাঁর সম্মান এবং তাঁর দলের জনগণের অধিকারের উপর আঘাত’ হেনেছে।
লে পেনের সমর্থকেরা মনে করেন, এই রায় তাঁদের নেত্রীকে আসন্ন নির্বাচনের দৌড় থেকে সরানোর একটি চক্রান্ত।
অন্যদিকে, বামপন্থী দলগুলো এই রায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তাদের মতে, আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রিন পার্টির নেতা মারিন টন্ডেলিয়ার বলেছেন, লে পেনের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর আঘাত। তিনি আরও যোগ করেন, “এই লড়াই শুধুমাত্র মারিন লে পেনের বিরুদ্ধে নয়, বরং এমন সব মানুষের বিরুদ্ধে যারা মনে করে বিচার তাদের ইচ্ছামতো হওয়া উচিত।”
লে পেনের দল ন্যাশনাল র্যালি (RN) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রায় গণতন্ত্রের প্রতি সরাসরি আঘাত এবং এটি ফরাসি জাতির ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দলটির প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা একে ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ বলেও অভিহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, মারিন লে পেন ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তহবিল থেকে কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এই কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দুই বছর স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১ লক্ষ ইউরো জরিমানা এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায়ের কারণে আগামী ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বদলে যেতে পারে। তবে, লে পেনের দল এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দল এবং তাঁর মিত্ররা এই রায়ের পরে আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
তাঁরা মনে করেন, কোনো রাজনীতিবিদ যদি কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত হন, তাহলে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, লে পেনের মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার প্রভাব আগামী দিনে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও গভীর হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান