ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাবের শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে এশিয়ার শেয়ার বাজারে, যা এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ‘অসুখ সারানোর’ ঔষধ হিসাবে কাজ করতে পারে, তবে এর ফলস্বরূপ মন্দা দেখা দিতে পারে।
সোমবার সকালে এশিয়ার শেয়ার বাজারে ধস নামে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার বাজারেও লেনদেন কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। তাইওয়ান স্টক এক্সচেঞ্জ বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার বাজারও বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ট্রাম্প বলেছেন, এই শুল্কগুলি মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং অন্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্য করতে বাধ্য করতে একটি পদক্ষেপ। তিনি জানান, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নেতারা তার সঙ্গে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা করতে চাইছেন।
তবে ট্রাম্প পরিষ্কার করে বলেছেন, আলোচনার জন্য তাদের বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ০.৩ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং বেকারত্বের হার বেড়ে ৫.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। গত কয়েকদিনে মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ কমে গেছে।
এদিকে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং তাইওয়ানের কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলি পণ্যের ওপর আরোপিত ১৭ শতাংশ শুল্ক মওকুফের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ২৬ শতাংশ শুল্কের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে না এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, যিনি ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত, ইইউ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে। গত কয়েক বছরে মার্কিন শেয়ার বাজারে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যেতে পারে।
এছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, সরকারের উচিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান