গাজায় মানবিক বিপর্যয়: অবরোধের দ্বিতীয় মাসে ত্রাণ সংস্থাগুলির উদ্বেগ
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ দ্বিতীয় মাসে পড়েছে, যার ফলে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং ত্রাণকর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, অবরুদ্ধ এই অঞ্চলের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অনাহার, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে রোগের প্রকোপ সেখানকার মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলা গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে তারা কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে আহত ও অসুস্থ মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবলের অভাবে চিকিৎসা পরিষেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের (OCHA) মতে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় দুই লক্ষ আশি হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং গাজার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বর্তমানে ‘নো-গো’ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজা সিটি পৌরসভার মুখপাত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ের সেনা অভিযানের কারণে মানুষজন উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছে এবং খোলা রাস্তা, পার্ক ও এমনকি ধ্বংসপ্রায় ভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (WFP) জানিয়েছে, গাজায় রান্নার গ্যাস ও আটার অভাবে ২৫টি রুটি তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় দশ লক্ষ মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে যে পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহ করা সম্ভব।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গাজার বাইরে প্রায় ৮৯ হাজার টন খাদ্য সহায়তা আটকে আছে।
অন্যদিকে, খাদ্য সংকটের কারণে বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার দুই-তৃতীয়াংশ পরিবারের সদস্যরা দৈনিক ৬ লিটার (প্রায় ২০০ আউন্স) বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে পারছে না।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির চরম অবনতি হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে উকুন ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন শিশু হতাহত হচ্ছে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, গাজার শিশুরা আবারও সহিংসতা ও কষ্টের শিকার হচ্ছে।
ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো বাস্তুচ্যুত শিশুদের পোশাক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা তাদের ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
সেখানকার আল-শিফা হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে, যেখানে সংঘর্ষ শুরুর আগে এই সংখ্যা ছিল ১৪০ জনের মতো।
গাজা শহরের আল-আহলি আরব ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের পরিচালক ড. ফাদেল নাঈম সিএনএনকে জানান, আহত ও নিহতদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেখানকার চিকিৎসকরা শুধুমাত্র যাদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি, তাদেরকেই চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পে লাজারি বলেছেন, গাজার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং সেখানে বিশৃঙ্খলা ও লুটপাটের ঘটনা বাড়ছে।
সংকট মোকাবিলায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমন্বিত ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনো পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
তথ্যসূত্র: সিএনএন