শিরোনাম: ১৭ বছর পর: আমেরিকার মাটিতে ফিরে এসেছে ‘মাদার অফ অল ব্রুডস’ -এর দল
বহু বছর পর, আমেরিকার আকাশে-বাতাসে আবার শোনা যাচ্ছে এক বিশেষ পতঙ্গের গুঞ্জন। ১৭ বছর পর পর মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার দল, যাদের ‘ব্রুড ১৪’ বলা হয়, তারা আবার ফিরে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দলটিকে ‘মাদার অফ অল ব্রুডস’ বলা হয়, অর্থাৎ অন্যান্য সব ১৭ বছর পর পর আসা ঝিঁঝিঁ পোকার দল এদের থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিরল ঘটনাটি শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনাই নয়, বরং বিজ্ঞানীদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়।
কিভাবে এই পোকাগুলো এত বছর মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে এবং তারপর দল বেঁধে বেরিয়ে আসে, তা জানতে চান গবেষকরা।
শুধু তাই নয়, এই পোকাদের জীবনচক্র, তাদের বিবর্তন এবং পরিবেশের উপর তাদের প্রভাব নিয়েও চলছে নানা গবেষণা।
ঐতিহাসিক নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৬৩৪ সালে প্রথমবার এই ঝিঁঝিঁ পোকার দলটিকে নথিভুক্ত করেছিলেন ঐতিহাসিকরা।
সেই সময়কার প্লিমথ কলোনির গভর্নর উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড এদের সম্পর্কে লিখেছিলেন, এরা বিশাল আকারের উড়ন্ত পোকা, যা অবিরাম শব্দ করে এবং পুরো বনভূমিকে মুখরিত করে তোলে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ঝিঁঝিঁ পোকার দল আসলে প্রতি ১৭ বছর পর পর এক সাথে মাটি থেকে ওঠে আসে।
এদের মধ্যে তিনটি প্রজাতি প্রধান, যাদের বৈজ্ঞানিক নাম হল *Magicicada cassini*, *Magicicada septendecim*, এবং *Magicicada septendecula*।
ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিনের কীটতত্ত্ববিদ পি জে লিয়েশ বলেন, “ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের কাছে এই ধরনের ঘটনার অন্য কোনো দৃষ্টান্ত ছিল না, সম্ভবত বাইবেলের দুর্যোগের গল্পগুলো ছাড়া।
তবে আদিবাসী আমেরিকানরা কিন্তু এই ঝিঁঝিঁ পোকা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং খাদ্য হিসেবেও তারা এগুলো ব্যবহার করতেন।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই পোকাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানেন, বিশেষ করে তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং তারা কিভাবে দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে, সে সম্পর্কে।
গবেষক জীন ক্রিটস্কি জানিয়েছেন, “এই পোকা একটি প্রজন্মের প্রতীক।
এই বিরল পোকাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞানীরা ‘সিকাডা সাফারী’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন।
এই অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ছবি আপলোড করতে পারেন, যা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাহায্য করে।
গত বছর এই অ্যাপে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ছবি জমা পড়েছিল।
এই মুহূর্তে, আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে এই ঝিঁঝিঁ পোকার দল তাদের আগমনী বার্তা জানাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণা ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করবে এবং প্রকৃতির এই বিস্ময়কর ঘটনার আরও গভীরে যেতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক