যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা অনুবাদ বন্ধ হওয়ায় ভাষাগত দুর্বলতার কারণে জীবনহানির আশঙ্কা বাড়ছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর তাদের সতর্কবার্তাগুলো এখন আর অনুবাদ করে প্রকাশ করছে না, যা সেখানে বসবাসকারী ভিন্ন ভাষাভাষীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জরুরি পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচানোর জন্য সময় মতো সতর্কবার্তা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই বার্তা যদি সহজে বোধগম্য না হয়, তবে তা চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর (National Weather Service) তাদের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে অনুবাদ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে স্প্যানিশ, চীনা, ভিয়েতনামি, ফরাসি এবং সামোয়ান ভাষায় আবহাওয়ার সতর্কতাগুলো পাওয়া যাচ্ছে না।
যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আবহাওয়া দপ্তর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত জীবন-মরণ সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ অনেক সময় ইংরেজি ভাষায় পাওয়া সতর্কতা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ ইংরেজি বাদে অন্য কোনো ভাষায় কথা বলেন। এর মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন।
ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইনের গবেষক জোসেফ ত্রুহিলো-ফালকন জানিয়েছেন, অনুবাদ করা আবহাওয়া সতর্কতা অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল।
২০২১ সালে কেনটাকিতে টর্নেডোর সময় স্প্যানিশ ভাষায় সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই একটি পরিবার দ্রুত আশ্রয় নিয়েছিল।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুধুমাত্র চরম আবহাওয়ার ক্ষেত্রেই জরুরি নয়, পর্যটন, পরিবহন এবং জ্বালানি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কলম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের একজন গবেষক অ্যান্ড্রু ক্রুজকিয়েভিজ মনে করেন, সঠিক সময়ে আবহাওয়ার তথ্য পেলে পরিবার ও ব্যবসায়ীরা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নোরমা মেন্ডোজা-ডেন্টন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা দৈনন্দিন জীবনে সীমিত ইংরেজি ব্যবহার করেন। তাদের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সতর্কবার্তা বোঝা কঠিন হতে পারে।
বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত ঘটনা। বর্ষাকালে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জীবনহানির ঝুঁকি থাকে।
তাই, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সতর্কবার্তা সবার কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে, স্থানীয় ভাষায় সতর্কবার্তা প্রচার করা, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এই বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে, যাতে দুর্যোগের সময় সবাই সময় মতো সতর্ক হতে পারে এবং জীবনহানি কমানো যায়।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।