যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকটি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই নতুন শুল্কের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত কর দিতে হবে।
এর মধ্যে চীনের পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক ১০৪ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে এশিয়ার কিছু বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে।
তাইওয়ানের শেয়ার বাজার ৫.৮ শতাংশ এবং জাপানের নিক্কেই সূচক ৫ শতাংশ কমে গেছে।
একই সময়ে, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে থাকায় ইয়েনের দাম ১ শতাংশ বেড়েছে।
হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১.৬ শতাংশ কমেছে, তবে চীনা বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তেলের দামও কমেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি একটি নির্দিষ্ট সূত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা বাণিজ্য ঘাটতিকে দ্বিগুণ করে আমদানির মোট মূল্যের সাথে ভাগ করে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে অনেক ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে এবং বাজারে জিনিসপত্রের দামও বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, নতুন শুল্কগুলো ‘সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে রয়েছে এবং তিনি আশা করছেন আলোচনার মাধ্যমে এগুলো কমানো যাবে।
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, এমন অনেক দেশ দ্রুত আলোচনার টেবিলে আসবে।
যদি তারা দৃঢ় প্রস্তাব নিয়ে আসে, তাহলে আমরা ভালো ফল পেতে পারি।”
ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য হলো, আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে পুনরায় আমেরিকায় ব্যবসা করতে উৎসাহিত করা এবং দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
তাইওয়ান তাদের স্টক এক্সচেঞ্জকে স্থিতিশীল রাখতে জরুরি তহবিল অনুমোদন করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া তাদের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের একটি জরুরি সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে নিউজিল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে।
ব্যাংকটি বলছে, “বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।”
যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কারো জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও উত্তেজনা কমাতে চাইছে।
ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডের লেন চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বাণিজ্য যুদ্ধ এড়িয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
তাই, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে তার বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান