কেরালায় সমুদ্রতীরে খনন কাজের বিরুদ্ধে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের প্রতিবাদ।
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশ ভারতের কেরালা রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলে নির্মাণ কাজের জন্য বালু উত্তোলনের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন সেখানকার মৎস্যজীবীরা। তাদের আশঙ্কা, এই খনন কাজ তাদের জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই খনন কাজগুলো মৎস্যজীবীদের সক্রিয় এলাকা থেকে দূরে করা হবে, তবে স্থানীয় জেলেদের দাবি, এর ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
জানা গেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য নিলামের ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে কেরালা রাজ্যের উপকূল থেকে নির্মাণ কাজের জন্য বালু উত্তোলনের জন্য তিনটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই তিনটি স্থানে প্রায় ৩০ কোটি টনের বেশি বালু মজুত রয়েছে, যা দিয়ে ১০,০০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ মহাসড়ক তৈরি করা যেতে পারে।
কিন্তু স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের প্রধান উদ্বেগ হলো, এই খনন কাজ তাদের জীবিকার প্রধান উৎস মাছের ভাণ্ডারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এছাড়াও, উপকূলের কাছাকাছি থাকা পাথুরে স্তূপগুলো, যা সমুদ্রের ঢেউ থেকে উপকূলকে রক্ষা করে, খনন কাজের ফলে সেগুলোরও ক্ষতি হতে পারে। এই ধরনের পাথুরে স্তূপগুলো ২০০৪ সালের সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কেরালাকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
কেরালা মৎস্যজীবী কো-অর্ডিনেশন কমিটি সহ বিভিন্ন সংগঠন এই খনন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ উপকূলীয় পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তারা মনে করেন, সরকার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও এই খনন পরিকল্পনার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন।
অন্যদিকে, সরকার বলছে যে এই খনন কাজ ভারতের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং উন্নয়নের জন্য জরুরি। তারা মনে করে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের নির্মাণ শিল্পের উন্নতি হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভীর সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলনের ফলে সমুদ্রের পানিতে ঘোলাত্ব বেড়ে যেতে পারে, যা সেখানকার জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর।
উল্লেখ্য, কেরালা রাজ্যের জলসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও খনন স্থানগুলো এই সীমার বাইরে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবুও মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান।
ফলে তাদের জীবিকার উপর এই প্রকল্পের প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বালু উত্তোলনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে এবং সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। অনেক দেশ গভীর সমুদ্রের খনন বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, কেরালা রাজ্যের মৎস্যজীবীদের এই উদ্বেগের প্রতি সরকার কতটা গুরুত্ব দেয়।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা