বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিশাল ডেটা সেন্টারগুলো স্থাপন এবং পরিচালনার ফলে পানির ব্যবহার বাড়ছে, যা ইতোমধ্যে জল সংকটে ভুগতে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি, ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর একটি অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও গুগল-এর মতো কোম্পানিগুলো তাদের ডেটা সেন্টার বানাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক এলাকাগুলোতে, যেখানে পানির অভাব তীব্র।
ক্লাউড কম্পিউটিং এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ডেটা সেন্টারগুলোর চাহিদা বাড়ছে, যার ফলস্বরূপ বাড়ছে বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা।
এই ডেটা সেন্টারগুলো মূলত তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। সেই সাথে, এগুলোতে এআই মডেল, যেমন- চ্যাটজিপিটি’র প্রশিক্ষণও চলে।
তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভারগুলোকে ঠান্ডা রাখতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই তিনটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো বিশ্বের এমন সব অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে পানির অভাব একটি গুরুতর সমস্যা।
শুধু তাই নয়, কোম্পানিগুলো আরও অনেক ডেটা সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি ডেটা সেন্টারের উদাহরণ দেওয়া যাক।
এখানে, অ্যামাজনের নতুন তিনটি ডেটা সেন্টারের জন্য বছরে প্রায় ৭,৫৫,৭২০ ঘনমিটার জল ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
এই পরিমাণ জল ওই অঞ্চলের প্রধান ফসল, ভুট্টা ক্ষেতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জলের সমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হিসাবের মধ্যে ডেটা সেন্টারগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ধরা হয়নি।
ফলে, বাস্তবে পানির ব্যবহার আরও অনেক বেশি হবে।
এমনকি অ্যামাজনের নতুন ডেটা সেন্টারগুলো একা ব্যবহার করবে পুরো অঞ্চলের বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদার থেকেও বেশি।
এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় পরিবেশবাদী এবং কৃষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের আশঙ্কা, ডেটা সেন্টারগুলোর জন্য জল ব্যবহারের ফলে তাদের সেচের কাজে পানির সংকট দেখা দেবে।
‘টু নুবে সেকা মি রিও’ (“Your cloud is drying my river”) নামের একটি সংগঠন স্পেনে নতুন ডেটা সেন্টার তৈরি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে স্পেনে হিট-ওয়েভের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর ফলস্বরূপ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই কোম্পানিগুলো তাদের জল ব্যবহারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অন্যান্য অঞ্চলে জল সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ‘ওয়াটার অফসেটিং’ নামে পরিচিত।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণের মতো জল অফসেটিং সম্ভব নয়।
কারণ, পানির সমস্যা স্থানীয় এবং একটি অঞ্চলের পানি অন্য অঞ্চলে সরবরাহ করার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অ্যারিজোনার মেসা শহরে গুগলের ডেটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
এখানেকার কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত ডেটা সেন্টারের কারণে পানির ওপর আরও বেশি চাপ পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যদিকে ডেটা সেন্টারগুলোর বিস্তার—এই দুইয়ের কারণে স্পেনসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির সংকট আমাদের দেশেও একটি বড় সমস্যা।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করলেও, এর পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
ডেটা সেন্টারগুলোর পানির চাহিদা এবং এর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তাই শুধু উন্নত দেশগুলোর সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়।
আমাদের দেশেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান