মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে চীনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ইইউ শহরে, যা বিশ্বের বৃহত্তম পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত।
এই বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে তাদের ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইইউ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগরীতে (Yiwu International Trade City) হাজার হাজার ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। ক্রিসমাস ডেকরেশন থেকে শুরু করে বাটন, ইলেকট্রিক শেভার—এমন অনেক সস্তা পণ্যের উৎপত্তিস্থল এই শহর। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা এখন বেশ উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীনের পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে, অনেক পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
ইইউ শহরের ব্যবসায়ীরা এই খবরে হতাশ। কারণ, তাঁরা এরই মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
চীনের ব্যবসায়ীরা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে অন্যান্য দেশের দিকে ঝুঁকছেন। সেখানকার অনেক ব্যবসায়ী মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে তাঁদের ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন।
উদাহরণস্বরূপ, যারা সৌন্দর্য সামগ্রী বিক্রি করেন, তাঁরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব এখনো বোঝা না গেলেও, এর ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবে।
তবে, শুধু মার্কিন শুল্কই নয়, ব্যবসায়ীরা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা নিয়েও চিন্তিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ক্লেমেন্টাইন নামের এক তরুণী জানান, তিনি এখানকার একটি পারফিউম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
তিনি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি তাঁদের মেনে নিতে হবে। কারণ, ট্রাম্প যা খুশি তাই করতে পারেন।
চীনের সরকারও চাইছে, রপ্তানিকারকরা যেন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে দূরে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে চীনের মোট রপ্তানির ১৯ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইইউ শহরের বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর তাদের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৬৯ বিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে, ১৮ শতাংশ বাণিজ্য হয়েছে আফ্রিকার সঙ্গে, ১৭ শতাংশ ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে এবং ১০ শতাংশ হয়েছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে।
অর্থনীতিবিদ ডায়ানা চয়েলেভার মতে, বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে চীনের অনেক সুবিধা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন, তবে এর ফলস্বরূপ ক্ষতির শিকার হবে মার্কিন ভোক্তারা।
বর্তমানে, অনেক ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পথে হেঁটে অন্যান্য দেশও চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। এমনটা হলে, তাঁদের পণ্যের দাম বাড়াতে হবে, যা তাঁদের মুনাফাকে আরও কমিয়ে দেবে।
একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেন, তবে এই বিষয়টি সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়। সাধারণ মানুষের কিছু করার নেই।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও বিশ্ব বাজারের দিকে নজর রাখতে হবে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ গভীর।
তাই, বিশ্ব বাণিজ্যের এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তবে, সুযোগও আসতে পারে।
চীনের পণ্যের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে। তাই, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian