থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন মার্কিন অধ্যাপক। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জেরে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত অধ্যাপক হলেন ৫৯ বছর বয়সী পল চেম্বার্স। তিনি থাইল্যান্ডের নারেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
জানা গেছে, অধ্যাপক চেম্বার্সকে মঙ্গলবার ফিতসানুলোক প্রদেশে আদালতে হাজির করা হয়। দেশটির কঠোর রাজকীয় অবমাননা আইন এবং অনলাইন বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের কম্পিউটার ক্রাইম অ্যাক্টের অধীনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালত তাকে জামিন দিতে রাজি হয়নি এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার আইনজীবী দল বুধবার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে, এখনো পর্যন্ত শুনানির দিন ধার্য করা হয়নি।
অধ্যাপক চেম্বার্স নর্দার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ১০ বছরের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডে শিক্ষকতা করছেন। তিনি থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন।
উল্লেখ, ১৯৩২ সাল থেকে থাইল্যান্ডে ১৩ বার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, যার সর্বশেষটি হয় ২০১৪ সালে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি সংগঠন ‘স্কলার্স অ্যাট রিস্ক’ (Scholars at Risk) জানিয়েছে, অধ্যাপক চেম্বার্সের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্ভবত সামরিক পুনর্গঠন নিয়ে একটি ওয়েবিনারে তাঁর মন্তব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। অভিযোগটি দায়ের করেছে থাইল্যান্ডের থার্ড আর্মি এরিয়া, যারা দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছে।
অধ্যাপক চেম্বার্সের স্ত্রী, যিনি নারেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (Associated Press) জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ‘আইএসইএএস-ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট’ (ISEAS-Yusof Ishak Institute) এর একটি বিবৃতি ব্যবহার করেছে, যেখানে ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, “মনে হচ্ছে তারা পলকে তার গবেষণা থেকে বিরত করতে চাইছে, যেখানে প্রায়শই থাই সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে।”
‘থাই লইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটস’ (Thai Lawyers for Human Rights) নামক একটি আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিদেশি নাগরিকত্ব এবং সম্ভাব্য কঠোর শাস্তির কারণে তাকে জামিন দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং কনস্যুলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের ‘লেজে-ম্যাজেস্ট’ আইনের (Lese-majeste Law) ব্যবহারের সমালোচনা করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানোর এবং ভিন্নমতকে দমন না করার আহ্বান জানিয়েছে।
থাইল্যান্ডের এই ‘লেজে-ম্যাজেস্ট’ আইন, যা ‘অনুচ্ছেদ ১১২’ নামে পরিচিত, রাজতন্ত্রের সমালোচনা করলে কঠোর শাস্তির বিধান দেয়। এই আইনটি মূলত রাজার সম্মানহানির সঙ্গে জড়িত এবং এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে কারাদণ্ডের মতো কঠিন শাস্তি হতে পারে।
সম্প্রতি, বিশেষ করে ২০২০ সাল থেকে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের কারণে এই বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিতর্ক বেড়েছে। ‘থাই লইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটস’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৭০ জনের বেশি, যাদের অধিকাংশই অ্যাক্টিভিস্ট, এই আইনের অধীনে অভিযুক্ত হয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, এই আইন প্রায়শই সরকারের সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা