রহস্যময় সমুদ্র: শত শত বছর ধরে নাবিকদের বিস্মিত করা আলোর ঝলকানির রহস্য উন্মোচন।
সমুদ্রের বুকে রাতের আঁধারে দুধের মতো সাদা আলোর বিচ্ছুরণ, যা দেখে বিস্মিত হয়েছেন বহু নাবিক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই বিরল দৃশ্য ‘মিল্কি সি’ বা দুগ্ধসাগর নামে পরিচিত।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিজ্ঞানীরা অবশেষে এর কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
বহু বছর ধরে নাবিকদের অভিজ্ঞতার বিবরণ, জাহাজের লগবুক, সংবাদপত্র এবং স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির (CSU) গবেষক জাস্টিন হাডসন এবং স্টিভেন মিলারের দীর্ঘ গবেষণার ফলস্বরূপ, দুগ্ধসাগরের ওপর সবচেয়ে বড় ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে।
তাদের মতে, ইতিহাসের পাতায় এই বিষয়টিকে রূপকথা এবং বৈজ্ঞানিক তথ্যের মাঝে বিবেচনা করা হতো।
দুগ্ধসাগর আসলে এক ধরনের বিরল জৈবপ্রভা, যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতের বেলা সমুদ্র যেন ঘন দুধ অথবা সাদা ক্রিমের মতো হয়ে যায় এবং এর উজ্জ্বলতা এতটাই বেশি হয় যে মনে হয় যেন সমুদ্রের নিচে সবুজ নিয়ন আলো জ্বলছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, *Vibrio harveyi* নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে এমনটা ঘটে।
এই আলো অনেক সময় কয়েক মাস ধরে স্থায়ী হতে পারে এবং এতটাই উজ্জ্বল হয় যে মহাকাশ থেকেও তা দেখা যেতে পারে।
তবে দিনের আলো অথবা চাঁদের আলোতে এর ঝলকানি দেখা যায় না।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই দুগ্ধসাগরের কাছাকাছি সমুদ্র শান্ত থাকে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এক ধরনের শৈবাল নিঃসৃত শ্লেষ্মা এই শান্ত অবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই দুগ্ধসাগর সাধারণত উত্তর-পশ্চিম ভারত মহাসাগর এবং মেরিটাইম কন্টিনেন্ট অঞ্চলে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, মেরিটাইম কন্টিনেন্ট হলো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও এর সৃষ্টি হতে পারে।
লা নিনা এবং ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা পরিবর্তনের ফলে দুগ্ধসাগরের ঘটনা বেড়ে যেতে পারে।
এর সঙ্গে শক্তিশালী মৌসুমী বায়ুরও সম্পর্ক থাকতে পারে।
শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের কারণে গভীর সমুদ্র থেকে পুষ্টি উপাদান উপরে উঠে আসে, যা খাদ্যশৃঙ্খলে পরিবর্তন ঘটায়।
গবেষকরা বলছেন, এই ডেটাবেস দুগ্ধসাগরের পূর্বাভাস দিতে এবং এর কারণ সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।
তবে, বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন যে এর গুরুত্ব কতটুকু।
দুগ্ধসাগরের ব্যাকটেরিয়া কিছু ক্ষেত্রে মাছের জীবনহানি ঘটায়।
তাই ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা বাড়ে, তবে তা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক