গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হচ্ছে অন্তত ৬০ হাজার শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পর্যাপ্ত পুষ্টি ও খাবার পানির অভাবে শিশুদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে পোলিওসহ অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচিও ব্যাহত হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সহ জরুরি সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে, ইতোমধ্যেই ২১টি পুষ্টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে, যেগুলোতে আগে প্রায় ৩৫০ জন মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর চিকিৎসা চলতো।
জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক কার্যকলাপের কারণে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় গাজায় কয়েক লক্ষ মানুষ তীব্র খাদ্য ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। ডব্লিউএফপি’র পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, তাদের কাছে মজুত থাকা খাদ্য দিয়ে আর সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সহায়তা কার্যক্রম চালানো সম্ভব।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মাস ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরওয়া’র কর্মকর্তা জুলিওত তুমা জানিয়েছেন, ‘গাজায় সব ধরনের জরুরি সরবরাহ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
এর অর্থ হলো, শিশুরা রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছে। এই জরুরি সরবরাহগুলো ছাড়া প্রতিদিন গাজা গভীর থেকে গভীরতর খাদ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
সংবাদ সংস্থা এএল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কোগাত-এর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠক করে গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ‘একটি কাঠামোবদ্ধ পর্যবেক্ষণ ও সহায়তা প্রবেশ প্রক্রিয়া’ প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের দাবি, হামাস বেসামরিক নাগরিকদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দেয়।
তবে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জোনাথন হুইটল এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জানিয়েছেন, ত্রাণ বিতরণে বাধা দেওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের একটি কোম্পানি মেকোরোট গাজায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ফিলিস্তিনি উপত্যকার ৭০ শতাংশ মানুষ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাজা পৌরসভার মুখপাত্র হুসনি মেহানা জানিয়েছেন, পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত প্রধান পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পানি সরবরাহ বন্ধের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি এবং ওই এলাকার ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে পাইপলাইনের কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কারণ যাই হোক না কেন, এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। মেকোরোট থেকে যদি দ্রুত পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করা না হয়, তাহলে গাজায় একটি ভয়াবহ পানি সংকট দেখা দেবে।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা