জার্মানিতে সরকার গঠনে অবশেষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল। দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহের দর কষাকষির পর, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (CDU)-এর নেতা ফ্রাইডরিশ মেরজের নেতৃত্বে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (SPD)-এর সঙ্গে জোট সরকার গড়তে রাজি হয়েছে তারা।
এই জোটের মূল লক্ষ্য হলো, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে জার্মানির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। সম্প্রতি, জার্মানির নির্বাচনে মেরজ জয়লাভ করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হন। এর ফলে সরকার গঠনে জটিলতা দেখা দেয়।
নতুন এই জোট সরকার গঠনের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। একদিকে যেমন বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ বেড়ে চলেছে, তেমনই অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যাও রয়েছে তাদের সামনে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা জার্মানির জন্য উদ্বেগের কারণ।
মেরজ জানিয়েছেন, এই জোট গঠনের মাধ্যমে তারা তাদের নাগরিকদের এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে চান। তিনি উল্লেখ করেন, জার্মানি এখন একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সরকার পেতে যাচ্ছে।
এই জোট গঠনের ফলে জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। মধ্যমেয়াদে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তবে মেরজ মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই বাণিজ্য যুদ্ধের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, জার্মানিতে অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে।
অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায়, নতুন সরকার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও, তারা কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, বিদ্যুতের দাম কমানো এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির শিল্পকে সহায়তা করার মতো পদক্ষেপ নেবে।
তবে, সরকারের ঋণ সীমা (debt brake) সংস্কারের বিষয়েও একটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, নির্বাচনে মেরজের দল ভালো ফল করলেও, জরিপে দেখা গেছে, কট্টর-ডানপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ (AfD) জনসমর্থনে এগিয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, জোট সরকার গঠন তাদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তবে, সরকার গঠনের আগে এই জোটকে এসপিডি-র সদস্যদের সমর্থন এবং সিডিইউ দলের একটি সম্মেলনে অনুমোদন পেতে হবে। এরপরই চ্যান্সেলর হিসেবে মেরজকে নির্বাচিত করা হবে।
এই জোট সরকার জার্মানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই সংকটকালে তারা দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা