চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ: উত্তেজনা বাড়ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগের ছায়া।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু দেশের ওপর শুল্ক আরোপে সাময়িক বিরতি দিলেও, চীন এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) বেইজিং ঘোষণা করে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করবে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প বাণিজ্য শুল্কের বিষয়ে কিছুটা শিথিলতা দেখানোর কথা জানান। তবে চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর বিশ্ব শেয়ার বাজারে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও, বাণিজ্য যুদ্ধের মূল কারণগুলো এখনো বিদ্যমান। তাই এই পরিস্থিতি বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে তাইওয়ানের শেয়ার বাজার ৯.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৭.২ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক ৫ শতাংশের বেশি বাড়ে। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচক ৬ শতাংশের বেশি এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ২.৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচকও ১.২৯ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – ডব্লিউটিও)-এর প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক যুদ্ধ চললে দেশ দুটির মধ্যে পণ্য বাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ হবে। কারণ, এই দুটি দেশ বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৩ শতাংশের যোগান দেয়।
চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। চীনের একটি শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দাম বাড়াতে অথবা বাজার ছাড়তে বাধ্য হতে পারেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণে এশিয়ার শেয়ার বাজারে কিছুটা তেজীভাব দেখা গেছে। ট্রাম্প যদিও বাণিজ্য শুল্কের বিষয়ে কিছুটা ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু এর প্রভাব যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশেও অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে, চীন অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে তারা বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিল্প সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা সফল হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, তারা এখনো তাদের পুরনো শুল্কনীতি পর্যালোচনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক রপ্তানি, আমদানি খরচ এবং প্রযুক্তি খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এখন থেকেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian