গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় হাসপাতাল, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
গাজা শহরের একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলার ফলে রোগীদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। রবিবার ভোরে আল-আহলি হাসপাতালে আঘাত হানে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী এলাকাটি খালি করার জন্য সতর্কবার্তা জারি করার পরেই এই হামলা চালানো হয়।
হামলার সময় জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা দিতে না পারায়, হাসপাতাল থেকে সরানোর সময় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার ফলে বহির্বিভাগের ওয়ার্ড এবং পরীক্ষাগারগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া, জরুরি বিভাগেও ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, হাসপাতালটি জেরুজালেমের একটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই দেইর আল-বালাহ শহরে চালানো পৃথক হামলায় অন্তত সাত জন নিহত হয়।
নিহতদের মধ্যে ছয় ভাই ও তাদের এক বন্ধু ছিল। আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের মর্গে নিহতদের মরদেহ রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস এই হাসপাতালটিকে তাদের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করত এবং সেখান থেকেই ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হতো।
তবে ইসরায়েল তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। তারা আরও জানায়, হামলার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য আকাশ থেকে নজরদারি করা হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, গাজাজুড়ে সামরিক অভিযান দ্রুত বাড়ানো হবে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে হবে।
শনিবার ইসরায়েল মোরাগ করিডোর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে, যার ফলে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ-এর সঙ্গে বাকি অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী খুব শীঘ্রই গাজার অধিকাংশ অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করবে বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়নি, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল জিম্মিদের মুক্তি এবং নতুন যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।
আল-আহলি হাসপাতালের পরিচালক ড. ফাদেল নাইম জানিয়েছেন, হামলার আগে তাদের সতর্ক করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ফার্মেসি এবং আশেপাশের ভবনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে শতাধিক রোগী ও ডজনখানেক স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইনে হাসপাতালগুলোকে বিশেষ সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।
সাধারণত, যুদ্ধকালে এমন ঘটনাগুলো খুবই ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা হয়।
কিন্তু গাজায় গত ১৮ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি অভিযানে হাসপাতালগুলোর ওপর সরাসরি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালগুলো অবরোধ ও একাধিকবার তল্লাশি চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে হাসপাতালগুলোকে যোদ্ধা লুকানোর কাজে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে।
গত মাসে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম শহর খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের হাসপাতালেও ইসরায়েল হামলা চালিয়েছিল।
এতে দুজন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান হামলায় হাসপাতালটি হতাহতদের ভিড়ে ভরে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়।
এতে ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
হামাস প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে এবং পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে তাদের অনেককে মুক্তি দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এ পর্যন্ত ৫০,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।
তবে হামলায় নিহতদের মধ্যে কতজন যোদ্ধা এবং কতজন বেসামরিক নাগরিক, সেই হিসাব আলাদাভাবে দেওয়া হয়নি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস