নাটকের প্রতি আগ্রহ কমার ফলে যুক্তরাজ্যে মঞ্চকর্মীর অভাব, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ঘোষণা।
যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে নাটক বিষয়টি আগের মতো গুরুত্ব না পাওয়ায়, এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি বিনোদন জগতে। মঞ্চে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে, তবে এর থেকেও বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কারিগরি বিভাগে।
পোশাকশিল্পী থেকে শুরু করে মঞ্চসজ্জা শিল্পী, এমনকি কম্পিউটার টেকনিশিয়ান— দক্ষ কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে এই শিল্পে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল থিয়েটারের (National Theatre – এনটি) নতুন পরিচালক ইন্দু রাবাসিংহাম এই সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তিনি এবং এনটির নির্বাহী পরিচালক কেট ভারা একযোগে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন।
তাদের পরিকল্পনা হলো, দেশব্যাপী দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো, পোশাক তৈরি ও নকশা থেকে শুরু করে মঞ্চ তৈরি এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন বিভাগে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
কেট ভারা জানান, “এই শিল্প দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু কর্মীর অভাবে তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সারাদেশে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিই এর সমাধান।” তিনি আরও বলেন, “পারফর্মিং আর্টস বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬৮ শতাংশ কমে গেছে।
একই সঙ্গে, জি.সি.এস.ই (মাধ্যমিক) এবং এ-লেভেল (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলস্বরূপ, তরুণ প্রজন্ম এখন থিয়েটারকে একটি পেশা হিসেবে ভাবতেই পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে, ন্যাশনাল থিয়েটার (এনটি) ব্যাংক অফ আমেরিকার সহযোগিতায় তাদের ন্যাশনাল থিয়েটার স্কিলস সেন্টারের (National Theatre Skills Centre) কার্যক্রম আরও তিন বছর ধরে প্রসারিত করতে চলেছে। লন্ডনের সাউথব্যাঙ্কে অবস্থিত এই কেন্দ্রে বর্তমানে প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ কার্যক্রম এবং বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে।
নতুন অর্থায়নের ফলে এনটির কারিগররা প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন।
এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের একজন হলেন সারা রে-ডবসন। তিনি বর্তমানে প্রপস বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছেন। সারা জানান, “আগে কখনো থিয়েটারে কাজ করিনি।
প্রপস তৈরি করা যে একটা পেশা হতে পারে, তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। এখানে কাজ করে খুব ভালো লাগছে। আমি এমন একটি শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামের কথাও আগে শুনিনি। এখানে আমি কাঠের কাজ, আসবাবপত্র তৈরি, এবং রঙ করার মতো বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করছি, যা ভবিষ্যতে আমার জন্য খুবই সহায়ক হবে।”
কেট ভারা আরও জানান, “সাংস্কৃতিক খাতে আমাদের প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মীপদ খালি রয়েছে। এর মূল কারণ হলো দক্ষ কর্মীর অভাব। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) হয়তো কিছু ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট নয়। বরং, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এই ধরনের কাজ করতে চান।”
র্যাভেন্সবোর্ন ইউনিভার্সিটি লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৭৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী সৃজনশীল শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী।
কেট ভারা বলেন, “কিন্তু তারা জানে না কীভাবে এই পেশায় প্রবেশ করতে হয়। ন্যাশনাল থিয়েটারের কাজ হলো তাদের পথ দেখানো।”
নটিংহ্যাম প্লে হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফানি সির বলেছেন, “আমাদের কর্মখালিগুলো পূরণের জন্য ২-৩ বার, এমনকি ৪ বার পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। কর্মী সংকট আমাদের কিছুটা অবাক করেছে এবং এটা উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আগেকার দিনের শিক্ষানবিশ কার্যক্রমের অভাবেও এই সমস্যা বেড়েছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা স্কুলে নাটক করে না, ফলে তারা মঞ্চ তৈরি, আলো সাজানো বা পোশাক তৈরির মতো কাজগুলো সম্পর্কে জানতে পারে না।”
স্টেফানি সির আরও জানান, নতুন কর্মীর অভাবে অভিজ্ঞ কর্মীরাও সহজে অবসর নিতে পারছেন না। এছাড়া, ভালো বেতনের কারণে অনেক তরুণ কর্মী লাইভ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের দিকে ঝুঁকছেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ন্যাশনাল থিয়েটার (এনটি) আগামী তিন বছরে ১৫,০০০ মানুষকে প্রশিক্ষিত করার আশা করছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এর ফলে তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং সৃজনশীল শিল্প আরও বিকশিত হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান