বর্তমান ফ্যাশন এবং রুচির পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্যাটুর চাহিদাও যেন একটি চক্রাকারে আবর্তিত হয়। নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে কোমর-সংলগ্ন স্থানে ট্যাটু আঁকার প্রবণতা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, যা ‘ট্রাম্প স্ট্যাম্প’ নামে পরিচিত ছিল।
সেই ট্যাটুর ডিজাইন আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর আগ্রহ বাড়ছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির একজন ট্যাটু শিল্পী, যিনি ‘ফিফথ নট সিক্সথ’ নামে পরিচিত, তিনি জানান, বর্তমানে এই ধরনের ট্যাটুর চাহিদা বাড়ছে।
তার মতে, “সাধারণত, যারা ট্যাটু করান, তাদের বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশের মধ্যে হয়ে থাকে। ইদানিংকালে আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘ট্রাম্প স্ট্যাম্প’-এর চাহিদা বৃদ্ধি হতে দেখছি।
ফ্যাশনের ক্ষেত্রে একটি চক্রাকার প্রক্রিয়া কাজ করে, যা একসময় ‘কুল’ ছিল, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা পুরনো হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন অনাগ্রহের পর, আবার তা নতুন করে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।”
আরেকজন শিল্পী, ফ্রান্সেস্কাও এই প্রসঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি জানান, তিনি যাদের এই ধরনের ট্যাটু করেছেন, তাদের সবাই ছিলেন হয় জেনারেশন-জেড অথবা তার চেয়ে সামান্য বড় প্রজন্মের।
ওহাইও’র ট্যাটু শিল্পী, হান্না হান জানান, তিনি শুধু এই ট্যাটুর চাহিদা বৃদ্ধিই দেখেননি, বরং ক্লায়েন্টরা আগের নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে এই শব্দটিকে (ট্রাম্প স্ট্যাম্প) পুনরায় গ্রহণ করতে শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি দেখেছি, অনেক তরুণী কোমর-সংলগ্ন স্থানে ট্যাটু করাতে আগ্রহী হচ্ছেন। আমিও ভবিষ্যতে এমন একটি ট্যাটু করার পরিকল্পনা করছি।
এমনকি, অনেকেই এখন ‘ট্রাম্প স্ট্যাম্প’ শব্দটি নিয়ে আগের মতো আপত্তি করেন না।”
টেক্সাসের ডাবলিন-এর ট্যাটু শিল্পী জেস জানিয়েছেন, তিনি কয়েকজনের জন্য এই ধরনের ট্যাটু করেছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমার একটি টিকটক ভিডিও, যেখানে একটি ‘ট্রাম্প স্ট্যাম্প’ দেখানো হয়েছিল, সেটি ভাইরাল হয় এবং মন্তব্যের ঘরে এই বিষয়ে প্রচুর আলোচনা হয়।”
জেস আরও জানান, এই ট্যাটু ট্রেন্ডে ২০২৩ সালে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে উপজাতিগত নকশা দেখা যেত, সেখানে এখন সাইবার ডিজাইন বা ফুলের মোটিফ দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ‘হ্যাসেল বাটার’-এর প্রো টিম আর্টিস্ট পিয়েরও লক্ষ্য করেছেন যে, কোমর-সংলগ্ন স্থানের ট্যাটুগুলো আরও রঙিন এবং নান্দনিক হচ্ছে।
তার মতে, “নব্বইয়ের দশকে উপজাতিগত ডিজাইন জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু এখন জলরং বা পেইন্ট-এর মতো ডিজাইন দেখা যাচ্ছে। এই ট্যাটুগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি তরল এবং বিমূর্ত।”
কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে মানুষ যে মানসিক অস্থিরতা অনুভব করেছে, সম্ভবত তারই ফলস্বরূপ এই ট্যাটুর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
২০২২ সালের অক্টোবরে, প্রভাবশালী কলি উইলসন টিকটকে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে তাকে এই ধরনের ট্যাটু করতে দেখা যায়। ভিডিওটি ৪০ লক্ষ ভিউ হয়।
মন্তব্যের ঘরে অনেকে এই ট্যাটুর প্রথম দিকের স্মৃতিচারণ করে এর বিরোধিতা করেন, আবার অনেকে কলিকে সমর্থন করেন।
তবে, সব ট্যাটু শিল্পী এই ট্রেন্ডের সঙ্গে একমত নন।
লস অ্যাঞ্জেলেস, টেক্সাস এবং নিউ ইয়র্কে কাজ করা ট্যাটু শিল্পী হোসে কন্ট্রেরাস বলেন, “আমি এখনো কোমর-সংলগ্ন ট্যাটুর ফিরে আসা দেখিনি। তবে, ফ্যাশনের এই চক্রাকার পরিবর্তনের কারণে, ভবিষ্যতে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “উদাহরণস্বরূপ, একসময় সাধারণ নকশার ট্যাটু খুব জনপ্রিয় ছিল। এরপর বাস্তবসম্মত ট্যাটুর চল আসে, যেখানে পুরো বাহুতে বড় আকারের ডিজাইন থাকত।
এখন আবার ছোট ছোট, বিক্ষিপ্ত বাস্তবসম্মত ট্যাটুর চাহিদা বাড়ছে, অনেকটা পুরনো দিনের সাধারণ ট্যাটুর মতো।”
লস অ্যাঞ্জেলেসের আরেকজন শিল্পী ড্যানিয়েল উইন্টার-এর মতে, “আমার স্টুডিওতে এই ট্রেন্ড মৃত।”
তিনি বলেন, “আমি কাউকে এখন আর এই ধরনের ট্যাটু করতে দেখি না। বরং, আমরা মজা করে বলি, ‘কখনো ‘ট্রাম্প স্ট্যাম্প’ করেছিলাম, তাই না?’ তারা তাদের ট্যাটু দেখায় আর আমরা হাসি।”
তথ্য সূত্র: পিপল