নবজাতকের ঘুম: শান্ত ঘর নাকি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে? বিশেষজ্ঞদের মতামত
শিশুদের ঘুমের ধরন নিয়ে নতুন পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দিনের বেলা শিশুদের ঘুম পাড়ানোর জন্য নিস্তব্ধ, অন্ধকার ঘর আদর্শ নয়। বরং, হালকা আলো এবং হালকা শব্দ আছে এমন পরিবেশে শিশুদের ঘুমানো উচিত। এমনটাই বলছেন ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলেন বল, যিনি শিশুদের ঘুম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। শিশুদের ঘুমের বিষয়ে অভিভাবকদের সঠিক ধারণা দিতেই এই গবেষণা।
অধ্যাপক বলের মতে, দিনের বেলায় লম্বা সময় ধরে ঘুমানো শিশুদের রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তার পরামর্শ হল, দিনের বেলায় শিশুদের স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে দেওয়া উচিত, যেখানে হালকা আলো এবং হালকা আওয়াজ থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিং মেশিনের শব্দ বা বাড়ির অন্য কোনো স্বাভাবিক শব্দ এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
তবে, অনেক অভিভাবক এবং ঘুম বিষয়ক পরামর্শদাতারা শিশুদের ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি করার কথা বলেন। তাদের মতে, শিশুদের কখন ঘুমোতে যাওয়া উচিত, সেই বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অধ্যাপক বল এই ধারণার সঙ্গে একমত নন। তার মতে, শিশুদের ঘুমের ক্ষেত্রে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম তৈরি করা উচিত নয়। কারণ, শিশুদের ঘুমের চাহিদা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন হতে পারে। কোনোদিন তারা হয়তো বেশি ক্লান্ত থাকে, আবার কোনোদিন কম। তাই, তাদের ঘুমের সময়সূচীও সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করা উচিত।
শিশুদের ঘুমের বিষয়ে এনএইচএস (NHS) এর পরামর্শ হল, শুরু থেকেই শিশুদের দিন ও রাতের মধ্যে পার্থক্য শেখানো উচিত। দিনের বেলা তাদের ঘর আলোকিত রাখতে হবে এবং খেলাধুলা করতে দিতে হবে। ঘুমের সময় ঘরের সাধারণ শব্দ নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। শিশুদের নিজস্ব ঘুমের একটি ধরন থাকে এবং এটি অন্যান্য শিশুদের থেকে আলাদা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শিশুদের ঘুমের বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা রাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং কান্নাকাটি করে। এর কারণ হতে পারে ক্ষুধা, দাঁত ওঠা অথবা কোনো নতুন জিনিস শেখার কারণে তাদের অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর জন্য ঘুমের ওষুধ বা অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করা উচিত নয়।
অন্যদিকে, শিশুদের ঘুমের সময়সূচী তৈরি করা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, শিশুদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত করা ভালো। আবার কারো কারো মতে, শিশুদের ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। তাদের ঘুমের ধরন তাদের নিজেদের মতো করে তৈরি হতে দেওয়া উচিত।
কিং’স কলেজ লন্ডনের শিশুঘুম বিষয়ক বিভাগের প্রধান এবং ইন্টারন্যাশনাল পেডিয়াট্রিক স্লিপ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক পল গ্রিংরাস এই বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের ঘুমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘুমের পরামর্শদাতাদের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, ঘুমের বিষয়ে ভুল পরামর্শ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশুদের ঘুমের বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের সুস্থ জীবনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। তাই, শিশুদের ঘুমের ধরন ও তাদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে অভিভাবকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: The Guardian