বিশ্বভ্রমণে আকাশপথ ব্যবহার করেননি, যা শেখালেন এক ড্যানিশ নাগরিক।
বহু মানুষের স্বপ্ন থাকে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখার। আধুনিক যুগে আকাশপথে দ্রুত সময়ে ভ্রমণ করা সম্ভব হলেও, ডেনমার্কের নাগরিক থর পেডারসেন অন্যরকম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি উড়োজাহাজ ব্যবহার না করে, স্থল ও জলপথে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই যাত্রা শেষ করতে তাঁর লেগেছিল প্রায় এক দশক। দীর্ঘ এই ভ্রমণে অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলো তিনি সম্প্রতি একটি বই আকারে প্রকাশ করেছেন। তাঁর ভ্রমণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
থর পেডারসেনের বিশ্বভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল, কোনো উড়োজাহাজ ব্যবহার না করে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ভ্রমণ করা। এই দুঃসাহসিক যাত্রায় তিনি বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করেছেন। ট্রেন, বাস, ফেরি এবং আরও নানা ধরনের যানবাহনে চড়ে তিনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়েছেন।
তাঁর এই ভ্রমণের সময়কালে তিনি মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, বিভিন্ন সংস্কৃতি কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন এবং অজস্র ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন।
ভ্রমণের শুরুতে, পেডারসেনের চোখে পরেছিল মানুষের অসাধারণ উদারতা। পোল্যান্ডের একটি শহরে, শীতের এক রাতে তিনি এক অচেনা নারীর কাছ থেকে আশ্রয় ও আতিথেয়তা পেয়েছিলেন। ভাষার ভিন্নতা সত্ত্বেও, মানুষ যে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, এটি ছিল তাঁর ভ্রমণের অন্যতম শিক্ষা।
লেসোথোর পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের সময় তিনি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন। পাহাড়, সবুজ উপত্যকা আর ঝর্ণার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তাঁকে মুগ্ধ করে। তাঁর মতে, প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো, যা অনেক সময় আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ভ্রমণের সময় তিনি ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রত্যক্ষ করেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও সেখানকার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তাঁকে বিস্মিত করেছে। স্থানীয় সংস্কৃতিতে আনন্দ এবং উৎসবের গুরুত্ব দেখে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন।
ভ্রমণের সময় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব অনুভব করেছেন পেডারসেন। ডেনমার্কে মানুষজন সাধারণত অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু আফ্রিকা এবং অন্যান্য অনেক দেশে, বাসের যাত্রীরা একসঙ্গে খাবার ভাগ করে নেয়, গল্প করে এবং শিশুদের দেখাশোনা করে।
এই ভ্রমণের মাধ্যমে পেডারসেন বুঝেছেন, মানুষের প্রয়োজন আর আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাঁর মতে, দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণের ফলে অনেক কিছুই একঘেয়ে লাগতে শুরু করে, কিন্তু ভ্রমণের আসল আনন্দ হলো নতুন কিছু শেখা।
ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা কঠিন নয়। বেলারুশ থেকে মস্কো যাওয়ার পথে, একই কামরায় থাকা অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তিনি খাবার ভাগ করে নিয়েছিলেন, গল্প করেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও করেছিলেন।
ধীর গতিতে ভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বিশালতা অনুভব করা যায়। আকাশপথে ভ্রমণের সময় যা বোঝা সম্ভব নয়, সেটি স্থল ও জলপথে ভ্রমণের সময় অনুভব করা যায়।
এছাড়াও, ভ্রমণের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। এর মাধ্যমে তিনি নতুন ভাষা শিখেছেন, ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছেন এবং ভূগোল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর জ্ঞান বেড়েছে।
থর পেডারসেন-এর এই ভ্রমণ আমাদের অনেক শিক্ষাই দিয়ে যায়। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখা, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করা উচিত। তাঁর ভ্রমণের গল্প আমাদের নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian