যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা ‘টার্গেট’-এর একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমানে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি, কোম্পানিটি তাদের ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (ডিইআই) বিষয়ক কিছু পদক্ষেপ কমিয়ে দেয়। এর ফলস্বরূপ, গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং এর জেরে শুরু হয় ব্যাপক আকারে ‘বয়কট’। এই ঘটনার মূল কারণ এবং প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জানা যায়, জানুয়ারির ২৪ তারিখে টার্গেট কর্তৃপক্ষ তাদের ডিইআই বিষয়ক প্রতিশ্রুতিগুলো সীমিত করার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পরেই ক্ষুব্ধ হন গ্রাহকরা। বিশেষ করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই কোম্পানির বৈচিত্র্য বিষয়ক উদ্যোগগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন, তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে, আটলন্টার নিউ বার্থ মিশনারি ব্যাপটিস্ট চার্চের সিনিয়র পাষ্টর রেভারেন্ড জামাল ব্রায়ান্টের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। তিনি ৪০ দিনের জন্য টার্গেট-এর পণ্য কেনাকাটা বন্ধ করার ডাক দেন। এই প্রতিবাদে দুই লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন।
প্রতিবাদের ফলস্বরূপ, টার্গেট-এর দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ এবং মার্চ মাসে ৬.৫ শতাংশ গ্রাহক কমেছে। যদিও এর পেছনে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, যেমন – ছুটির মরসুমের পরে কেনাকাটার প্রবণতা হ্রাস এবং আবহাওয়ার প্রভাব।
তবে, প্রতিবাদকারীদের চাপে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে টার্গেট কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের যে প্রতিশ্রুতি তারা আগে করেছিল, তা তারা বহাল রাখবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, অনেকেই মনে করছেন, কর্পোরেট জগৎ-এ ডিইআই নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যদিও টার্গেট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তাদের কর্মীদের এবং গ্রাহকদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে, প্রতিবাদকারীরা এখনই তাদের বয়কট কর্মসূচি স্থগিত করতে রাজি নয়। তারা চাইছে, টার্গেট কর্তৃপক্ষ যেন তাদের উদ্বেগের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেয়। তাদের মতে, এই বয়কট কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে, কোম্পানিটিকে তাদের নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করা যাবে।
বর্তমানে, টার্গেট-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় চলছে। কারণ, ২০২৬ সাল নাগাদ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ক্রয়ক্ষমতা ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ডিইআই বিষয়ক নীতি পরিবর্তনের কারণে টার্গেট-এর ব্যবসায়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে, টার্গেট-এর ব্যবসায়িক অংশীদার, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে, কেউ কেউ তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিক্রি বাড়িয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিষয়টি এখন শুধু একটি কোম্পানির সিদ্ধান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিইআই নীতি, গ্রাহক অধিকার এবং কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে একটি বৃহত্তর বিতর্কের অংশ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন