অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করার ফলে কোমর ব্যথায় (Back Pain) ভোগেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আমাদের দেশেও এই সমস্যা বাড়ছে, বিশেষ করে যারা কম্পিউটার ও অফিসের অন্যান্য চেয়ার নির্ভর কাজ করেন।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে এবং মাংসপেশি শক্ত হয়ে আসে। এর ফলস্বরূপ দেখা দেয় কোমর ব্যথা।
এমন পরিস্থিতিতে একটি সমাধান হতে পারে ‘standing desk’ বা দাঁড়িয়ে কাজ করার ব্যবস্থা। সম্প্রতি, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম কোমর ব্যথার একটি কার্যকরী, অস্ত্রোপচারবিহীন চিকিৎসা।
যুক্তরাজ্যের একটি ঘটনার কথা বলি। ২০১৯ সালে, লেখক সাইকেল চালিয়ে অফিসে যেতেন, বক্সিং করতেন, বাস্কেটবল খেলতেন এবং যোগাভ্যাসও করতেন। একদিন, তিনি একটি বাক্স তুলতে গিয়ে সামান্য ঝাঁকুনি অনুভব করলেন, কিন্তু সেটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি।
রাতে বাস্কেটবল খেলার পরে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পারলেন না। কোমর থেকে তীব্র ব্যথায় তিনি কান্না শুরু করে দিলেন।
অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। বসারও উপায় ছিল না। এরপর তিনি অনলাইনে এর সমাধান খুঁজতে শুরু করেন।
এনএইচএস (NHS – যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা)-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, সম্ভবত এটি পেশি-টানাজনিত সমস্যা এবং ধীরে ধীরে সেরে যাবে। তারা কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়, যেমন – বরফ ও গরম সেঁক দেওয়া এবং কিছু স্ট্রেচিং করা।
কয়েক দিন পর ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি জানান, মাংসপেশিতে খিঁচুনি ধরেছে এবং শীঘ্রই তা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যথা কমেনি।
অবশেষে, কয়েক সপ্তাহ কর্মবিরতির পর তিনি একটি ব্যক্তিগত এমআরআই (MRI) স্ক্যান করান। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ব্যথার কারণ পেশি নয়, বরং তাঁর কোমর ডিস্ক (Disc) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটি তাঁর স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
চিকিৎসা শুরু হলো, ফিজিওথেরাপি নিলেন। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করলো।
কিন্তু অফিসে ফিরে যাওয়ার পর দেখা গেল, আগের মতোই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন, সারাদিন বসে থাকা তাঁর জন্য সবচেয়ে খারাপ। তখন তিনি অফিসে ‘standing desk’ চেয়ে আবেদন করলেন।
শুরুতে অফিসের সবাই যখন বসে কাজ করত, তখন তিনি একাই দাঁড়িয়ে থাকতেন। এটা তাঁর কাছে কিছুটা অদ্ভুত লাগতো।
এই ডেস্কটি ছিল সহজে পরিবর্তনযোগ্য। বসার ও দাঁড়ানোর মধ্যে পরিবর্তন করা যেত। প্রথম দিকে দাঁড়িয়ে কাজ করতে খুব ক্লান্ত লাগতো, তবে ধীরে ধীরে তিনি এর সঙ্গে মানিয়ে নিলেন।
অফিসের কর্মীরা তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইত এবং এখন কয়েকজন যাদের কোমর ব্যথার সমস্যা ছিল, তারাও ‘standing desk’ ব্যবহার শুরু করেছে।
বর্তমানে, তিনি সারাদিন দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তবে মাঝে মাঝে হাঁটাচলার জন্য বিরতি নেন। বাড়িতে কাজ করার সময়ও তিনি বইয়ের উপর ল্যাপটপ রেখে দাঁড়িয়ে কাজ করেন।
তিনি ভালো ভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করেন এবং কিছু তোলার সময় অবশ্যই হাঁটু বাঁকিয়ে নেন। গত পাঁচ বছরে তাঁর কোমর ব্যথার সমস্যা আর হয়নি।
এই ঘটনার মাধ্যমে জানা যায়, ‘standing desk’ কোমর ব্যথার সমাধানে বেশ কার্যকরী। যারা অফিসে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
তবে সবার জন্য এটি সম্ভব নাও হতে পারে। তাই, নিয়মিত বিরতিতে হাঁটাচলা করা, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং ব্যায়াম করা – কোমর ব্যথার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian