যুক্তরাজ্যে একটি শক্তি সরবরাহকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে দুর্বল শ্রেণীর মানুষের প্রতি তাদের সেবার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ব্রিটিশ গ্যাস নামক এই কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রিপেমেন্ট মিটার সংক্রান্ত বিলিংয়ে গুরুতর ত্রুটি এবং গ্রাহক সেবার দুর্বলতার অভিযোগ উঠেছে। এতে দরিদ্র ও উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর মানুষজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আশ্রয় পাওয়া একজন উদ্বাস্তু ব্যক্তি সামাজিক আবাসন পাওয়ার পর ব্রিটিশ গ্যাসের প্রিপেমেন্ট মিটারে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ নেন।
কিন্তু পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, আগের ভাড়াটের বিদ্যুতের বকেয়া বিল তাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর ফলে তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৫৪ পাউন্ড কেটে নেওয়া হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় (১ পাউন্ড = ১৩০ টাকা ধরে) প্রায় ৭,০২০ টাকার মতো।
ওই ব্যক্তির অভিযোগ, এই বিষয়ে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। বরং তাকে হয়রানি করা হয়েছে।
আরেকটি ঘটনায়, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মায়ের হিসাবের ব্যালেন্সের গুরুতর তারতম্য দেখা যায়।
তার অ্যাকাউন্টে কখনো ৪,০০০ পাউন্ড (প্রায় ৫,২০,০০০ টাকা), আবার কখনো ৫,০০০ পাউন্ডের (প্রায় ৬,৫০,০০০ টাকা) বেশি জমা দেখাচ্ছিল, যা মূলত তাদের ভুলের ফল। এমনকি, এই ত্রুটির কারণে তিনি ব্রিটিশ গ্যাস এনার্জি ট্রাস্ট থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারেন।
এই ধরনের ঘটনাগুলোতে ব্রিটিশ গ্যাসের গ্রাহক পরিষেবা এবং বিলিং প্রক্রিয়ার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়।
অভিযোগ উঠেছে, কোম্পানিটি গ্রাহকদের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানেও তারা ব্যর্থ। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে এবং তাদের গরম জল ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সমস্যাগুলো দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে।
উন্নত দেশগুলোতেও যদি এমন হয়, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব আরও অনেক বেশি।
কারণ, আমাদের দেশেও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল নিয়ে প্রায়ই গ্রাহকদের নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায়।
ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোর মতে, কোনো কোম্পানির এমন ভুল হলে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
একইসঙ্গে, সরকারের উচিত শক্তি সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ওপর আরও বেশি নজরদারি করা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করা এবং স্বচ্ছ বিলিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
এটি কেবল একটি কোম্পানির সমস্যা নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান