ড্রোন ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমানবন্দরগুলোর কাছাকাছি উড়োজাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় উড়ন্ত ড্রোনের কারণে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের উপক্রম হচ্ছে, যা বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত বছর দেশটির ব্যস্ততম ৩০টি বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামার সময় ড্রোনের কারণে হওয়া দুর্ঘটনা বা তার কাছাকাছি ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২০ সালের পর এই ধরনের ঘটনা এটাই সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে ড্রোন সম্পর্কিত দুর্ঘটনার সূচনা হয় এবং এর পরের বছরগুলিতে এই সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত এক দশকে ড্রোন সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ৫১ শতাংশ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজের সঙ্গে অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোনের সহজলভ্যতা এবং উন্নত প্রযুক্তির কারণে এর ব্যবহার বাড়ছে। এর ফলে বিমানবন্দরের কাছাকাছি আকাশপথে উড়োজাহাজ ও ড্রোনের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকিও বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি উড়োজাহাজ অবতরণের সময় ককপিটের খুব কাছ দিয়ে একটি ড্রোন উড়ে যায়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে গত বছর মায়ামি ও নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরেও।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ড্রোন ব্যবহারের ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিমানবন্দরের কাছাকাছি ড্রোন ওড়ানোর জন্য পূর্ব অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া, ২৫০ গ্রামের বেশি ওজনের ড্রোনের জন্য রেজিস্ট্রেশন এবং এর অবস্থান জানানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এফএএ ড্রোন শনাক্তকরণ এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছে। এর মধ্যে রয়েছে, রেডিও সংকেতের মাধ্যমে ড্রোনকে অকার্যকর করা বা নামিয়ে আনা। এছাড়াও, কর্তৃপক্ষ ড্রোন নিয়ন্ত্রণে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ বা লেজার রশ্মি ব্যবহার করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তারা সুপারিশ করেছেন, রাস্তার স্পিড ক্যামেরার মতো একটি ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে, যা ড্রোনের ট্রান্সপন্ডার কোড শনাক্ত করে পাইলটকে জরিমানা করতে পারবে। এছাড়া, প্রস্তুতকারকদের ড্রোনের জিপিএস সিস্টেমে এমন প্রযুক্তি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যা বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় ড্রোন ওড়ানো বন্ধ করবে।
এই বিষয়ে ড্রোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ডিজেআই (DJI)-এর এক মুখপাত্র জানান, তারা আগে তাদের তৈরি ড্রোনে জিওফেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করত, যা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে ড্রোন ওড়ানো নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পাওয়া অনেক অনুরোধ সামাল দিতে সমস্যা হওয়ায় তারা এই প্রযুক্তি সরিয়ে দিয়েছে।
বিমানবন্দরের কাছাকাছি অনিরাপদভাবে ড্রোন ওড়ানোর দায়ে সম্প্রতি কিছু মানুষের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। বোস্টন পুলিশ গত ডিসেম্বরে একটি ড্রোনের পাইলটকে গ্রেপ্তার করে, যিনি বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন ওড়াচ্ছিলেন। এছাড়া, ক্যালিফোর্নিয়ায় অগ্নিনির্বাপক একটি বিমানের সঙ্গে ড্রোনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে ড্রোনের আঘাতে বিমানের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনগুলোর কঠোর প্রয়োগ এবং নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস