জার্মানির একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য: ইস্টার উৎসবে সোরবিয়ানদের ডিম সাজানোর সংস্কৃতি। বসন্তের আগমনীর সাথে সাথে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী সোরবিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষের মনে লাগে উৎসবের ছোঁয়া।
তাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ইস্টার উৎসবে ডিম সাজানোর এক বিশেষ রীতি। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য আজও তাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সোরবিয়ানরা মূলত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা স্লাভিক উপজাতির বংশধর। প্রায় ১,৫০০ বছর আগে তারা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
বর্তমানে জার্মানির স্যাক্সনি ও ব্র্যান্ডেনবার্গ রাজ্যে প্রায় ৬০,০০০ সোরবিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। ইস্টার তাদের কাছে বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব।
এই ডিম সাজানোর কাজটি মোটেও সহজ নয়। প্রতিটি ডিম যেন এক একটি ক্যানভাস, যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয় কারুকার্যখচিত নকশা।
মোমের প্রলেপ দিয়ে শুরু করে, বিভিন্ন রঙের ডাই ব্যবহার করে চলে এই শিল্পকর্ম। কেউ কেউ সুঁচের সাহায্যে, আবার কেউ বা পাখির পালকের ডগা ব্যবহার করে ডিমের গায়ে আঁকেন নানারকম নকশা।
এই নকশাগুলোর মধ্যে থাকে মৌচাকের মতো জটিল ডিজাইন। প্রত্যেকটি ডিজাইন-এর আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। এই ডিমগুলো গডপ্যারেন্টরা তাদের গডচাইল্ডদের উপহার দেয়, যা তাদের একাগ্রতা এবং ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করে।
শ্লাইফে শহরে প্রতি বছর ইস্টার বাজারের আয়োজন করা হয়। এই বাজারে সোরবিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের হাতে তৈরি ডিম বিক্রি করেন।
সেখানে গেলে এই ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায়। ডিমের আকারের ওপর নির্ভর করে একেকটির দাম ৭ ইউরো (প্রায় ৮০০ টাকা) থেকে শুরু করে ৯০ ইউরো (প্রায় ১০,৪০০ টাকা) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
একটি ডিম সাজাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা থেকে শুরু করে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আর্টিজান (শিল্পী) আংকে হানুশ জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই এই কাজ করে আসছেন। তার বাবার দিক থেকে তিনি সোরবিয়ান।
শুধু তিনিই নন, সোরবিয়ান শিশুরা খুব ছোট বয়স থেকেই ডিম সাজানো শুরু করে, যা তাদের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। হানুশ মনে করেন, এই ঐতিহ্য একটি মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদ, যা টিকিয়ে রাখা জরুরি।
ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি সোরবিয়ানরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা সচেষ্ট।
ইস্টার উৎসব তাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে চলছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস